প্রতীকী ছবি।
শুধু বড় আবাসনেই নয়, মাঝারি ও ছোট আবাসনেও বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হোক। না হলে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতেই কলকাতার অবস্থা চেন্নাইয়ের মতো হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ। তাই রবিবার রাজ্য সরকার পালিত ‘জল সংরক্ষণ দিবস’-এ এই প্রস্তাবই দিলেন তাঁরা।
এমনিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে ২২ মার্চ ‘বিশ্ব জল দিবস’ পালন করা হয়। গত বছর থেকে ১২ জুলাই জল সংরক্ষণ দিবস পালন শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতির কারণে এই দিবসের তাৎপর্য বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, সার্স-কোভ-২ দূরে রাখতে বার বার হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। সেখানে ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর (সিএসই) সমীক্ষা বলছে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে এক জন ব্যক্তির গড়ে ৩০-৪৫ সেকেন্ড সময় লাগে। দেখা গিয়েছে, সাবান হাতে ঘষার সময়ে বেশির ভাগ মানুষই কল খুলে রাখেন। ফলে সেই সময়ে কল থেকে অনবরত জল পড়তে থাকে। এমন প্রতিটি ক্ষেত্রেই গড়ে ৪ লিটার জল খরচ হয়। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এক জন ব্যক্তি যদি দিনে ১০ বার হাতে সাবান দেন, তা হলে হিসেব মতো শুধু তাঁর হাত ধুতেই জল খরচের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪০ লিটার। ফলে করোনা আবহে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, শহরে বড় বহুতলগুলির (২০০০০ বর্গমিটার বা তার বেশি আয়তনের ছাদের) ক্ষেত্রে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাঝারি বা ছোট আবাসনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। অথচ সেই আবাসনগুলিতেও সহজেই বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা যায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধ্যাপক তথা ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়’-এর প্রধান পঙ্কজকুমার রায়ের বক্তব্য, বড় বহুতলগুলির পাশাপাশি মাঝারি এবং ছোট বহুতলেও প্রতিদিন অনেক জল খরচ হয়। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয় না। অথচ বাগানে জল দেওয়া, গাড়ি ধোয়া-সহ বহু কাজ বৃষ্টির জলেই করা যায়। পঙ্কজবাবুর কথায়, ‘‘ছোট ছোট ক্লাস্টারেও বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হোক। এটা এমন কিছু জটিল বিষয় নয়। ছাদে একটা পাইপ লাগাতে হবে যাতে বৃষ্টির জল সেই পাইপের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। আর নীচে একটা ছোট জলাধার তৈরি করতে হবে। সেখানে বৃষ্টির জল এসে জমা হবে।’’ ‘ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ় অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’-এর অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী তপন সাহা জানাচ্ছেন, নতুন বাড়ি তৈরির আবেদনে যদি কেউ দেখায় যে, তাঁর বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতি রয়েছে, তা হলে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটি ছাড় দেওয়া হয়। তপনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে শুধু সাধারণ মানুষই নন, পুরসভাগুলির অনেক আধিকারিকই অবহিত নন। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের কতটা প্রয়োজন। শুধু হাত ধুতে যে পরিমাণ জল খরচ হচ্ছে, তারও কিছুটা যদি সংরক্ষণ করা যেত, তা হলেও কাজের কাজ হত।’’
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম রবিবার একটি ভিডিয়ো বার্তায় কলকাতার নাগরিকদের কাছে জল অপচয় না করার জন্য আবেদন করেন। কলকাতার অবস্থা যাতে চেন্নাই, রাজস্থানের মতো না হয়, তাই সবাইকে জল খরচের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে বলে জানান। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘অনুরোধ-উপরোধে কাজ হবে না। যত দিন না জল অপচয়ের জন্য জরিমানা ধার্য হচ্ছে, তত দিন সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে সতর্ক হবেন না।’’