— ফাইল চিত্র
আকস্মিক লকডাউন যে জীবন ও জীবিকায় এ ভাবে আচমকা তালা ঝুলিয়ে দেবে, তা দুঃস্বপ্নেও কখনও ভাবেননি গড়িয়া স্টেশনের চা-ঘুগনি বিক্রেতা শ্যামাপদ দাস। তাঁর মতোই লকডাউনের পরিণতি আগাম টের পাননি টালিগঞ্জ স্টেশন চত্বরের পেয়ারা ও শসা বিক্রেতা শেখ রাজু। শুরুর দু’চার দিন কষ্টেসৃষ্টে চালিয়ে নিলেও লকডাউন দীর্ঘ হতেই চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসতে শুরু করে তাঁদের।
গত সাত মাস দু’বেলা ভাত জোটাতেই হিমশিম খেয়েছেন তাঁরা। আনাজ থেকে মাছ, দুধ থেকে পাউরুটি বা স্যানিটাইজ়ার— কী না বেচতে হয়েছে! তবু সুরাহা তেমন হয়নি। শিয়ালদহ উত্তর ও দক্ষিণ শাখার অজস্র ছোট দোকানি এবং হকারেরও একই অবস্থা। লোকাল ট্রেনের চাকা আবার ঘুরবে, এই খবরে আশার আলো দেখেছিলেন তাঁরাও। কিন্তু করোনা আবহে ট্রেনের কামরায় এবং স্টেশনে ভিড় কমাতে হকার ও ছোট দোকানিদের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রেল। তাই লোকালের চাকা গড়ালেও পরিস্থিতি কবে ফের স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় হকারেরা।
মাঝেরহাট, বালিগঞ্জ, সোনারপুর, যাদবপুর এবং দমদমের মতো বেশ কিছু স্টেশনে আরপিএফ এবং জিআরপি-র কড়া নজরদারি থাকায় বুধবার ছোট দোকানিরা কেউই প্রায় বসতে পারেননি। তবে উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির ছোট কিছু স্টেশনে রেলের নজরদারি কম থাকায় সেখানে অল্প সংখ্যক দোকানি দোকান খুলতে পেরেছিলেন বলে খবর। হকারদের ক্ষেত্রে অবশ্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। টিকিট কেটে ভেন্ডর কামরায় উঠে শহরে পণ্য আনা-নেওয়ার অনুমতি মিললেও ফেরি করার সুযোগ সে ভাবে কেউই পাননি। সন্ধ্যার দিকে অবশ্য ছোটখাটো স্টেশনগুলিতে এবং ভেন্ডর কামরার আশপাশে কিছু হকারকে জিনিস বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই ফল বিক্রেতা। তবে চা, বাদাম, চানাচুর, সেফটিপিন বা গামছা বিক্রেতাদের যে ভিড় স্বাভাবিক সময়ে লোকাল ট্রেনে দেখা যা, তা এ দিন দেখা যায়নি।
গড়িয়া স্টেশনের এক ছোট দোকানি বললেন, ‘‘শীতে বিক্রিবাটা ভালই হয়। সেই আশাতেই চেষ্টা করছি যদি দোকানটা চালু করা যায়। রেল আটকালে অবশ্য চালু হবে না।’’ রেলকর্তাদের দাবি, স্টেশনে দোকান খোলার সুযোগ দিলে মানুষের অনর্থক যাতায়াত এবং ভিড় বাড়বে।
দক্ষিণ শাখার অনেক স্টেশনেই আগে প্ল্যাটফর্মে কার্যত বাজার বসে যেত। করোনা আবহে দূরত্ব-বিধি মানার স্বার্থে এখন আর তা বসতে দেওয়া হচ্ছে না। হকারেরা ভিড়ে ঠাসা একাধিক ট্রেনে উঠে পণ্য ফেরি করেন। তাই সে ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি বলে মনে করছেন রেলের কর্তারা। রেলের তরফে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পরিষেবা শুরুর প্রথম দিন দূরত্ব-বিধি সর্বত্র রক্ষা করা যায়নি বলেই অভিযোগ।