Burnt Cars

ক্ষতিপূরণ দেবে কে? পোড়া গাড়ির জট না কাটায় নাকাল মালিকেরা

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার রাতে। এন্টালির একটি আবাসনের এক বাসিন্দা বারাম খামরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি যেখানে মোটরবাইক রাখেন, সেখানে অন্য কেউ মোটরবাইক রেখেছেন দেখে রাগে সেই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

স্টিয়ারিং, যাত্রীর আসন, ইঞ্জিন, টায়ার— গলে গিয়েছে সব। গলে গিয়েছে ‘অ্যালয় হুইল’ও। টিকে আছে গাড়ির কাঠামো ও ডিস্ক ব্রেকের ধাতব অংশ। ঘটনার কয়েক দিন পরেও এ ভাবেই পড়ে এন্টালির আবাসনের গাড়িগুলি। একই অবস্থায় রয়েছে পুড়ে যাওয়া মোটরবাইকও। গাড়ি ও বাইকের মালিকেরা ভেবে পাচ্ছেন না, কী ভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন। হাত তুলে নিয়েছে বিমা সংস্থাও।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার রাতে। এন্টালির একটি আবাসনের এক বাসিন্দা বারাম খামরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি যেখানে মোটরবাইক রাখেন, সেখানে অন্য কেউ মোটরবাইক রেখেছেন দেখে রাগে সেই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনায় সাতটি মোটরবাইক ও তিনটি গাড়ি পুড়ে যায়। আগুন নেভাতে যায় দমকল। বারামকে গ্রেফতার করা হয়।

এর পর থেকেই নাজেহাল অবস্থা গাড়ি ও মোটরবাইক মালিকদের। পুড়ে যাওয়া একটি গাড়ির মালিকের দাবি, ‘‘মাস দুয়েক আগেই ফার্স্ট পার্টি বিমা নবীকরণ করিয়েছিলাম। এখন ওই বিমা সংস্থা বলছে, ঝড়-বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় এমনটা হয়নি, তাই ক্ষতিপূরণ মিলবে না। প্রয়োজনে মামলা করতে বলা হয়েছে। মামলা করে ক্ষতিপূরণ পেতে তো আরও সময় লেগে যাবে।’’ ক্ষতিগ্রস্ত এক মোটরবাইক মালিকের দাবি, ‘‘বিমা সংস্থা বলেছে, মামলা হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনার মতো করে দেখানোও যাবে না। মামলা না মেটা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ঝুলেই থাকবে।’’

Advertisement

বিমা সংস্থায় খোঁজ করেও জানা গেল, এমন ঘটনায় সংস্থা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় না। কারণ যে হেতু কেউ অপরাধ করেছেন, সেটা বিমা সংস্থার দেখার বিষয় নয়। একটি আন্তর্জাতিক বিমা সংস্থার পূর্ব ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা নব্যেন্দ্যু ঘোষ বললেন, ‘‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহক বিমার সঙ্গে ‘রিটার্ন টু ইনভয়েস’ সুবিধা নিয়ে রাখেন। এতে বিমার খরচ বাড়ে। সে ক্ষেত্রে গাড়ির দাম ক্ষতিপূরণ হিসাবে পেতে পারেন মালিক। কিন্তু তাতেও নিয়ম রয়েছে। প্রতি বার বিমা পুনর্নবীকরণের সময়ে গাড়ির তৎক্ষণাৎ একটা দাম ধার্য হয়। যাকে ইনসিয়োর্ড ডিক্লেয়ার্ড ভ্যালু (আইডিভি) বলা হয়। রিটার্ন টু ইনভয়েস করানো থাকলে এই দামটুকু পেতে পারেন মালিক। কিন্তু প্রতি দিনই আইডিভি কমতে থাকে। দেখা যায়, যে দামে গাড়ি কেনা হয়েছে, আইডিভি মিলছে অনেকটাই কম। তবে এ ক্ষেত্রে এই নিয়মও কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’’

কারণ হিসাবে সুজুকি সংস্থার বিমা আধিকারিক রোহন আগারওয়াল বললেন, ‘‘আইডিভি যত বেশি, বিমার খরচ তত বেশি। তাই গ্রাহকই কম করে আইডিভি দেখান। এই ভাবনা কাজ করে যে গাড়ি সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার মতো আপৎকালীন ঘটনা ঘটবে কবে, কেউ জানেন না। সেটা হতে পারে ধরে নিয়ে আগে থেকে বেশি করে কেউ কেন টাকা দিয়ে যাবেন! যেমন, এই ঘটনায় প্রমাণ করা যাবে না, দুর্ঘটনা না কি অন্য ভাবে এটা হয়েছে।’’

আইনজীবী দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। তাই আদালতের নির্দেশ জানার আগে কোনও বিমা সংস্থাই ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হবে না। গাড়ির ধাক্কায় মানুষের মৃত্যুতেও ক্ষতিপূরণ পেতে একই ভাবে সমস্যায় পড়তে হয়। গাড়ির মালিক দেবেন, না কি বিমা সংস্থা, দর কষাকষি চলতে থাকে। পুলিশেরই উচিত কড়া হাতে মামলা করা।’’

লালবাজার জানিয়েছে, এ ভাবে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা অভিনব। কড়া ধারা যুক্ত করে এগোনো হচ্ছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃতের বিরুদ্ধে ‘মেনটেন্যান্স অব পিস অ্যান্ড পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট’-এর ধারা জুড়তে চেয়ে কোর্টে আবেদন করা হয়েছে। এতে ধৃত দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর থেকে গাড়ি ও বাইকের দাম আদায় করা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement