Gas Cylinder Burst

আগুন জ্বেলে ‘অবৈধ’ ব্যবসার রমরমা কেষ্টপুরে, প্রশ্নে প্রশাসন

এ দিন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, ওই ঘটনায় মানুষ আতঙ্কে থাকলেও অবাধেই বিভিন্ন দোকানে গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না হচ্ছে। অথচ, অধিকাংশ দোকানেরই আগুন জ্বালিয়ে রান্না করার প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪০
Share:

সিলিন্ডার ফাটার পরে ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক আহতকে। বৃহস্পতিবার, কেষ্টপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

একচিলতে দোকান কয়েক বার হাত বদল হওয়ার পরে পরোটার দোকান হয়েছিল। কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লির সেই দোকানেই বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্যাস সিলিন্ডার ফাটায় ২৩ জন জখম হন। দোকানের মালিক কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বাগুইআটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ফোন বন্ধ রাখায় কৃষ্ণের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

Advertisement

স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছেন, ওই এলাকার অদূরে কৃষ্ণের পরিবারের একটি মোমোর দোকান রয়েছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকে সেটিও বন্ধ। যে বাড়ির নীচে ওই দোকান, সেই বাড়ির লোকজনও এ দিন কোনও কথা বলতে রাজি হননি। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় জখম ২৩ জনের মধ্যে বিধাননগর পুরসভার কর্মী সুদীপ্ত সেন-সহ তিন জনের শুক্রবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

এ দিন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, ওই ঘটনায় মানুষ আতঙ্কে থাকলেও অবাধেই বিভিন্ন দোকানে গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না হচ্ছে। অথচ, অধিকাংশ দোকানেরই আগুন জ্বালিয়ে রান্না করার প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ। কিন্তু তা নিয়ে কারও কোনও হেলদোলও নেই। এমনই অভিযোগ স্থানীয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি মণীশ মুখোপাধ্যায়ের। এ দিন মণীশ বলেন, ‘‘ওই সব দোকানের মধ্যে কতগুলির আগুন জ্বালিয়ে ব্যবসা করার ছাড়পত্র রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য পুরসভা, দমকল, পুলিশ, জেল প্রশাসন— সর্বস্তরে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। চিঠির প্রতিলিপিও দেখিয়ে দিতে পারি। নিজে দিনকয়েক আগে কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছি। সমাজমাধ্যমে অভিযানের লাইভ ফুটেজ রয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, কৃষ্ণের ওই পরোটার দোকানে বাণিজ্যিক সিলিন্ডার ব্যবহার করা হত। যেটি ১৯ কেজির। স্থানীয়েরাই পুলিশকে সেই তথ্য দিয়েছেন। কারণ, বিস্ফোরণের পরে সিলিন্ডারের অবশিষ্টাংশ ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছিল। এই ভাবে বাণিজ্যিক সিলিন্ডার ব্যবহার করে ব্যবসা গোটা বিধাননগর পুর এলাকার বিভিন্ন জায়গাতেই চলছে। ক’জনের ব্যবসা বৈধ, তা নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছেই। স্থানীয় মানুষ জানাচ্ছেন, কেষ্টপুর অঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো খাবারের দোকান গজিয়ে উঠেছে।

কিন্তু কেন এমন বিপজ্জনক ভাবে ব্যবসা হচ্ছে? পুলিশ হানা দিয়ে বৈধতা পরীক্ষা করে না কেন? বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (বিমানবন্দর) ঐশ্বর্যা বলেন, ‘‘কিসের ব্যবসা হচ্ছে, ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে কি না, এ সব দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর রয়েছে। কে, কী সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন, সেটা দেখা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ অবশ্যই দেখবে। ওই পরোটার দোকানের মালিককেও খোঁজা হচ্ছে।’’

বিধাননগর পুর এলাকার ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে অভিযোগ, এক দিকে সল্টলেকে বিভিন্ন আবাসিক বাড়ির নীচে স্পা, রেস্তরাঁ, কাফে গজিয়ে উঠেছে। আবার রাজারহাটেও বিভিন্ন আবাসিক বাড়ির নীচে ব্যাঙের ছাতার মতো খাবারের দোকান হয়েছে। কিন্তু সেই সব ব্যবসা কতটা নিরাপদে চলছে, সে দিকে প্রশাসনের নজর নেই বলেই অভিযোগ।

ভাড়ার বিনিময়ে এ ভাবে বাসিন্দারাই বাড়ি জতুগৃহে পরিণত করবেন, দোকানদারেরা কোনও রকম অগ্নিবিধি মানবেন না, বিস্ফোরণে নিরীহ পথচারী জখম হবেন— এ সব তবে ঠেকানো হবে কী ভাবে? বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (বিপর্যয় মোকাবিলা) আরাত্রিকা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা বার বার দোকানিদের সতর্ক করি। কেউ শোনেন, কেউ শোনেন না। আমরাও চাই, এ ভাবে যেন বিপদ মাথায় নিয়ে কেউ ব্যবসা না করেন।’’ তবে, এ পর্যন্ত এ সব নিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা যে নেওয়া যায়নি, তা-ও জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ।

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী জানান, বিধাননগর পুরসভার তরফে রবীন্দ্রপল্লির ঘটনা তাঁর দফতরে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তা রক্ষা করা বিশেষ প্রয়োজন। বিধাননগর পুরসভা ও বিধাননগরের পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement