kali Puja 2022

পুজো দেখার ভিড় কই? মণ্ডপ রক্ষা করেই দিন কাটল উদ্যোক্তাদের

কলকাতায় কালীপুজো দেখতে সব চেয়ে বেশি ভিড় হয় আমহার্স্ট স্ট্রিট চত্বরে। তার পরেই খিদিরপুর ও দমদম রোডে। অন্যান্য বার দুপুর থেকেই সেখানে ভিড়ের চাপে দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১৮
Share:

পায়ে পায়ে: বৃষ্টি মাথায় করেই ঠাকুর দেখা। সোমবার, আমহার্স্ট স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আতঙ্ক যতটা ছিল, ভোগান্তি ঠিক ততটা হল না। দিনভর আকাশের মুখ কালো হয়ে থাকলেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ তেমন ভারী বৃষ্টি কলকাতার কোথাওই হল না। তবে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে দিনভর যা হল, তাতেই নাজেহাল কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের বড় অংশ। কেউ প্লাস্টিক দিয়ে মণ্ডপ ঢাকলেন, কেউ মণ্ডপের মাথায় নুতন করে টিনের ছাউনি দিলেন। অনেকে আবার মণ্ডপ চত্বরে জল জমার আশঙ্কায় ছুটলেন স্থানীয় পুর প্রশাসকের কার্যালয়ে। তবে, সব চেয়ে বেশি চিন্তা রইল মণ্ডপ চত্বরে লাগানো আলো ঘিরে। সেগুলিকে প্লাস্টিকে মুড়ে বন্ধ করে রেখেও কাটল না আশঙ্কা!

Advertisement

কলকাতায় কালীপুজো দেখতে সব চেয়ে বেশি ভিড় হয় আমহার্স্ট স্ট্রিট চত্বরে। তার পরেই খিদিরপুর ও দমদম রোডে। অন্যান্য বার দুপুর থেকেই সেখানে ভিড়ের চাপে দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সন্ধ্যার পরে যা আরও বাড়ে। করোনা-পর্ব কেটে যাওয়ায় এ বারে মনে করা হয়েছিল, দুর্গাপুজোর মতোই ভিড়ে ভাসবে ওই সমস্ত এলাকা। কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে সন্ধ্যার পরেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো কম। রাত আটটার পরে কিছু লোকজন দেখা গেল আমহার্স্ট স্ট্রিটে। সেখানে ছাতা মাথায় মণ্ডপে ঢোকার মুখে এক দর্শনার্থী বললেন, ‘‘সারা দিন ভয়ে ছিলাম। ঝড়-বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে গেলে কী আর দেখতে বেরোব? সন্ধ্যার পরে শুনলাম, আর তেমন ভয় নেই। তাই বেরিয়ে পড়েছি।’’ আর এক দর্শনার্থীর মন্তব্য, ‘‘রাত পর্যন্ত ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই আমহার্স্ট স্ট্রিটে ঢোকা যাবে না। তাই শুরুতেই এখানে এসেছি। এর পরে দমদম ঘুরে বারাসতের দিকে যাব।’’ এর পরেই নিজের ছেলেকে বললেন, ‘‘ঠাকুর দেখো, কিন্তু কাছে গিয়ে আলো দেখতে যেও না। কোথায় জল পড়ে কী হয়ে আছে, কে জানে!’’

আলোর এই আতঙ্কই সোমেন মিত্রের (ছোড়দা) পুজো বলে পরিচিত আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তা বাদল ভট্টাচার্যের গলায়। বললেন, ‘‘দিনভর এমন ঘ্যানঘ্যানে আবহাওয়ার চেয়ে কিছুটা বৃষ্টি হয়ে বন্ধ হলে ভাল হত। সব চেয়ে বেশি ভয় মণ্ডপের চার দিকের আলোর সজ্জা নিয়ে। সারা দিনই সেগুলিকে প্লাস্টিকে ঢেকে রাখা হয়েছে। তবু কোনও ভাবে বিদ্যুৎবাহী হয়ে গেলে আর দেখতে হবে না।’’ ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় এ বার এমন আলোর জন্যই আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মণ্ডপে। পুজোর জন্য নেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেখাশোনা করতে লোক রাখা হয়েছে চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘ, খিদিরপুর সর্বশ্রী সঙ্ঘ বা হরিদেবপুর নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবে। বাঘা যতীনের একটি পুজোয় আবার পাওয়ার সার্কিট ব্লক করতে আলাদা লুপের ব্যবস্থা ছিল। এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘রাতে পুজোর সময়টুকু ভালয় ভালয় কেটে গেলেই হল। মেন সুইচ আর বিদ্যুতের লাইনের প্যানেলের সামনে আলাদা লোক রেখেছি।’’ বৃষ্টি নিয়ে একই রকম দাবি মধ্য কলকাতার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের। পোশাকি নাম নব যুবক সঙ্ঘ হলেও এটি ফাটাকেষ্টর পুজো নামেই পরিচিত। সম্পাদক সুকৃতি দত্ত রাতের দিকে বললেন, ‘‘মণ্ডপ নিয়ে তেমন চিন্তা নেই। টিনের ছাউনি দিয়েছি। আমাদের প্রতি বারই পুরাণের কিছু একটা করা হয়। এ বার ১১ হাতের গণেশ হয়েছে। সেটি পুরো প্লাস্টিকে মোড়া। কিন্তু, দর্শনার্থীরই তো দেখা নেই।’’

Advertisement

দুর্যোগের আশঙ্কার মধ্যেও অবশ্য রাত যত বাড়ল, এলাকায় এলাকায় ততই বাড়ল দেদার বাজি ফাটানো। পুলিশি ধরপাকড়েও সুরাহা হল না, বৃষ্টিতেও কমল না। বহু জায়গায় আবার বড় রাস্তাকে টেক্কা দিল গলির তাণ্ডব। মানা হল না আদালতের নির্দেশ।

এরই পাশাপাশি চলল হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের দৌরাত্ম্য ও তারস্বরে মাইক বাজানো। অভিযোগ, বহু জায়গাতেই ভোর পর্যন্ত চলেছে এমন শব্দ-তাণ্ডব। অভিযোগ পেয়ে বেলেঘাটার একটি বহুতলে বক্স বাজানো বন্ধ করতে গিয়ে পুলিশকে আবার শুনতে হয়েছে, ‘‘বৃষ্টিতে তো পুজোর আনন্দ মাটি হলই, পুলিশ নাচানাচির আনন্দটাও মাটি করল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement