তছনছ: অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুরের পরে। শনিবার, বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাতে তুলকালাম বাধল বারাসতের একটি এলাকায়। পরে ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই পকসো আইনে গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্তকে। খোঁজ চলছে পলাতক অন্য অভিযুক্তের। ধৃতের নাম বিপুলচন্দ্র বিশ্বাস।
কিশোরীর পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, ছাত্রীটির গৃহশিক্ষক নিজের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একাধিক বার তাকে ধর্ষণ করেছে। অভিযোগ, মোবাইলে সেই দৃশ্য বন্দি করে ওই কিশোরীকে ব্ল্যাকমেল করছিল বিপুল। শুক্রবার রাতে ছাত্রীটি তার বাড়িতে সব ঘটনা জানিয়ে দেয়। এর পরেই এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্তের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। মারধরও করা হয় বিপুলকে। বারাসত থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক বিপুলের অভিযুক্ত বন্ধু।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ওই কিশোরীর গৃহশিক্ষক ছিল বিপুল। সম্প্রতি বিপুল ছাত্রীকে জানায়, কিশোরীর জন্ম শংসাপত্রে কিছু ভুল রয়েছে, তার এক আইনজীবী বন্ধুর সাহায্যে সেই ভুল সংশোধন করিয়ে দেবে সে। অভিযোগ, মাস কয়েক আগে ওই আইনজীবী বন্ধুর কাছে নিয়ে যাওয়ার নাম করে একটি ফাঁকা বাড়িতে কিশোরীকে নিয়ে যায় বিপুল। সেখানেই ছিল অন্য অভিযুক্ত। ফাঁকা বাড়িতে দু’জনে মিলে ধর্ষণ করে ওই কিশোরীকে।
পুলিশকে কিশোরী জানিয়েছে, ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে তুলে রেখেছিল ওরা। তা দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেল করছিল দুই অভিযুক্ত। এই ঘটনা বাড়িতে জানালে ওই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দিয়েছিল দু’জনে। শুক্রবার রাতেও বিপুলের কাছে পড়তে গিয়েছিল ওই কিশোরী। ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। বাড়ির লোকেরা দেরির কারণ জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়ে কিশোরী। সে জানায়, তাকে একটা ফাঁকা বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে বিপুল ও তার এক বন্ধু। তখনই আগের ঘটনাও জানায় সে।
এর পরেই কিশোরীর বাড়ির লোকেরা পাড়ার বাসিন্দাদের সব কিছু জানান। তখন পাড়ার লোকেরাই বিপুলের বাড়িতে চড়াও হয়। তাকে টেনে বাড়ি থেকে বার করে এনে শুরু হয় গণধোলাই। বাড়ির আসবাব থেকে শুরু করে দরজা-জানলা ও বিভিন্ন জিনিসপত্র ভেঙে তছনছ করে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশ এসে
পরিস্থিতি সামাল দেয়। ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে বিপুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এলাকায় সক্রিয় বিজেপি কর্মী হিসেবেই পরিচিত বিপুল। তার স্ত্রীর দাবি, বিজেপি করে বলেই তাঁর স্বামীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ওই কিশোরীকে দিয়ে শাসকদলই মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা মিলন সর্দারের বক্তব্য, “এলাকার লোক ওই অভিযুক্তকে জানেন। ফাঁসানো আমাদের দলের সংস্কৃতি নয়।”