নেতাজি ইন্ডোরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘আমি আজ ভীষণ খুশি। মুখ্যমন্ত্রী যখন আদিবাসী শিল্পীদের সঙ্গে নিজেই বাদ্যযন্ত্র বাজালেন, নাচলেন তালে তালে, আমার ভীষণ ভাল লাগল। এটা সবাইকে সমান ভাববার একটি চিহ্ন। সবাইকে সম্মান দেওয়া। সবাইকে সমান ভাবে কাছে টেনে নেওয়া, সব সংস্কৃতিকে সম্মান দেওয়া— এটা বড় কলা। এটা মুখ্যমন্ত্রীর আছে। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।’’
‘‘সবাইকে সমান ভাবা, সবাইকে সম্মান দেওয়া, সবাইকে আপন করার গুণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আজ অভিভূত।’’ বললেন রাষ্ট্রপতি।
‘‘বাংলা ভাষা আমার খুব মিষ্টি লাগে। যখন এই ভাষা শুনি মনে হয় গ্রামের আশেপাশেই আছি। এমনই এই ভাষার সুবাস।’’ বললেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। নাম নিলেন সত্যজিৎ রায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বলেন, ‘‘আত্মসম্মান তথা আত্মগৌরবের জন্য বাংলার পরিচয় রয়েছে। কেবল ১৮ বছর বয়সে ভারতমাতার জন্য ফাঁসিতে চড়েছেন ক্ষুদিরাম বসু। ‘‘এক বার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি’’— গানটি এখনও বাংলার সব কচিকাচারা গায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলা ভাষা আমার ভীষণ মিষ্টি লাগে। সুইট ল্যাঙ্গুয়েজ। এই ভাষা যখনই আমার কানে আসে আমার মনে হয়, নিজের গ্রাম-জেলার আশেপাশেই আছি। এমনই এই ভাষার সৌন্দর্য, এমনই এর সুবাস।’’
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শোনা গেল রাষ্ট্রপতির গলায়। বললেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থানে গিয়ে ভাগ্যবতী বলে মনে করেন। তুলে ধরলেন ক্ষুদিরাম বসুর কথা। শহিদ ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশকে শ্রদ্ধা জানান তিনি। বলেন, ‘‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তৃতা শুরু রাষ্ট্রপতির। বাংলায় বললেন, ‘‘বাংলার ভাইবোনদের শুভেচ্ছা। জয় জহর।’’ জানালেন বেলুড় মঠে যাওয়ার জন্য তিনি উদগ্রীব। তুলে ধরলেন বাংলার সংস্কৃতির কথা।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মাননায় বক্তব্য করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বললেন, শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের মানুষ রাষ্ট্রপতিকে কাছে পেয়ে সম্মানিত। তিনি তুলে ধরেন বাংলার কৃষ্টি এবং সংস্কৃতির কথা।
মমতা বলেন, ‘‘বাংলা মানে মানবতা। আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। আমি বলি না। আমি মানুষ।’’
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নাগরিক সংবর্ধনা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। তবে এই অনুষ্ঠান বয়কট করেছে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারীদের দাবি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদীর বিরুদ্ধে যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন, সেই তাঁরাই এখন তাঁকে সম্মান জানাতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে একে একে স্মারক তুলে দেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা। সরকারের প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত সংবাদমাধ্য়মের প্রতিনিধিরাও।
রাষ্ট্রপতিকে নাগরিক সংবর্ধনা দিল রাজ্য সরকার। রাষ্ট্রপতি মুর্মুর হাতে দুর্গামূর্তি তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীকে নাচতে দেখে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতি একত্রে হাততালি দিয়ে উঠলেন। পরে করমর্দন করে নিজেদের আসনে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপাল।
রাষ্ট্রপতির সফরকে কেন্দ্র করে কলকাতায় গত কয়েক দিন ধরেই সাজ সাজ রব। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা শহর। শহরের একাধিক এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সোমবার এবং মঙ্গলবার কোথায় কোথায় যান চলাচলে রাশ টানা হবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।