এক মঞ্চে মমতা-পিকে। নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার তৃণমূলের বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠকের মঞ্চে দেখা গেল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে (পিকে)। যে মঞ্চে ছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীরা। যাঁদের সঙ্গে পিকে-র ‘দূরত্ব’ নিয়ে সম্প্রতি শাসকদলের অন্দরের রাজনীতিতে জোরাল জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বস্তুত, মমতার সঙ্গে মঞ্চে একাধিক বার পিকে-কে একান্তে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে।
মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের ওই দৃশ্য যদি কোনও ইঙ্গিত বহন করে, তা হলে তা নির্ভুল ভাবে মমতা-পিকে দূরত্বের জল্পনায় ইতি টানার। বস্তুত, তৃণমূলের নেতাদের একাংশ এমনও বলছে, দলের সর্বময় নেত্রীর সঙ্গে পিকে-র কোনও দূরত্বই রচিত হয়নি। পুরোটাই রটনা। যদিও দলের অপর অংশের মতে, ‘মতানৈক্য’ একটা হয়েছিল। কিন্তু তা কখনওই অনতিক্রম্য হয়ে দেখা দেয়নি। দলের বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠকের মঞ্চে পিকে-র উপস্থিতিই তার প্রমাণ। ওই মঞ্চে আসীন ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও মমতা ছাড়া কেউই মঞ্চে বক্তৃতা করেননি।
প্রসঙ্গত, ২০২১ বিধানসভা ভোটে বিশাল ব্যবধানে তৃণমূলের জয়ের মাত্র মাস ছয়েকের মধ্যেই পিকে-র সংস্থা ‘আইপ্যাক’-এর সঙ্গে ঘাসফুলের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন এবং জল্পনা তৈরি হয়। তা আরও ইন্ধন পেয়েছিল সদ্যসমাপ্ত ১০৮টি পুরসভা ভোটের আগে প্রার্থিতালিকা প্রকাশ নিয়ে। তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের একটা অংশ অভিযোগ করে, তাদের অজান্তে আইপ্যাক নিজেদের ইচ্ছে মতো প্রার্থিতালিকা তৈরি করেছে। এমনকি, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, পার্থ-বক্সীরা নতুন প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেন। মমতাও সেই প্রার্থিতালিকাকে ‘চূড়ান্ত’ বলে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করেন। তখনই মমতা-পিকে ‘দূরত্ব’ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। দলের একাংশ বলতে শুরু করে, পিকে-র সংস্থার কাজে ‘ক্ষুণ্ণ’ হন মমতা। এমনও জল্পনা তৈরি হয়ে যে, পিকে নাকি মমতাকে জানিয়ে দিয়েছেন, এর পর আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করবে না আইপ্যাক। মমতাও নাকি তাতে সম্মতি দেন।
পাশাপাশি, অভিষেক-পিকে প্রণীত ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি নিয়েও দলের অন্দরে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। নেটমাধ্যমে দু’পক্ষের বিবৃতি এবং পাল্টা বিবৃতিও দেখা যেতে থাকে। যদিও আইপ্যাকের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছিল, তারা কোনও ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে পুরভোটের সঙ্গে যুক্ত নয়। পিকে নিজেও প্রকাশ্যেই জানান, তাঁর সঙ্গে মমতার কোনও দূরত্বই তৈরি হয়নি। সেই বক্তব্যেরই প্রকাশ মঙ্গলবার নজরুল মঞ্তে ফলিত স্তরে দেখা গেল বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ।
তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে পিকে-র সংস্থা আইপ্যাকের চুক্তি ছিল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত। তার পরে দু’পক্ষের মধ্যে কোনও লিখিত চুক্তি থাকেনি। যদিও একটি ‘সমঝোতা’র ভিত্তিতে দু’পক্ষ মিলেমিশে কাজ করছিল।