যদিও লকেট নিজে তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা নিজেরাই হয়তো তৃণমূলের থেকে টাকাপয়সা নিয়ে বসে এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন।’’
লকেট চট্টোপাধ্যায়।
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ-দেওয়া জয়প্রকাশ মজুমদারের পর কি রাজ্যের শাসক শিবিরে নাম লেখাতে চলেছেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়? গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্য বিজেপি-তে এমন একটা জল্পনা শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার জয়প্রকাশ নজরুল মঞ্চে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর (এবং মঞ্চেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাঁকে দলের সহ-সভাপতি পদে নিয়োগ করা) লকেটকে নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে।
যদিও লকেট নিজে তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা নিজেরাই হয়তো তৃণমূলের থেকে টাকাপয়সা নিয়ে বসে এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন। যাঁরা দলের স্বার্থে লড়াই করবেন, লকেট চট্টোপাধ্যায় তাঁদের সাথে আছে। আর যাঁরা তৃণমূলের স্বার্থে লড়াই করবেন, তাঁরা তৃণমূলে যেতে পারেন।’’
দলের অন্দরে বিভিন্ন বিষয়ে লকেটের যে ক্ষোভ রয়েছে, তা জানেন বিজেপি-র রাজ্য নেতারাও। প্রথমত, ২০১৯ সালে হুগলিতে লড়াই করে জয়ের পরেও তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব না-দেওয়ায় লকেট ক্ষুব্ধ ছিলেন। দলের অন্দরে সেই অনুযোগ তিনি প্রকাশও করেছিলেন। দলের অন্য একাংশের দাবি, লকেট রাজ্যে সভাপতি হতে চান। কারণ, দলের বর্তমান পদাধিকারীদের উপর তাঁর ‘আস্থা’ নেই। তিনি মনে করেন, এই পদাধিকারীরা দলকে রাজ্যে কোনও ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন না। এখন যেমন সুকান্ত মজুমদার, তেমনই অতীতে দিলীপ ঘোষকে নিয়েও লকেটের ‘অনুযোগ’ ছিল। ঘটনাচক্রে, দলের অন্দরে অপর মহিলা নেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গেও লকেটের সম্পর্কে একটা ‘শৈত্য’ রয়েছে।
তবে লকেটের তরফে কোনও সময়েই এমন কোনও কথা প্রকাশ্যে বলা হয়নি। ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলে লকেট বরাবর তা দলের অন্দরেই বলেছেন। যেমন সাম্প্রতিক বৈঠকেও বলেছেন।
কিন্তু তার পরেই সোমবার দলের দুই ‘বিক্ষুব্ধ’ জয়প্রকাশ এবং রীতেশ তিওয়ারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন লকেট। তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই জয়প্রকাশ গিয়েছেন তৃণমূলে। ফলে অনেকেই দুইয়ে-দুইয়ে চার করেছেন। লকেট যদিও বলেছেন, তিনি জয়প্রকাশকে দল ছেড়ে তৃণমূলে যেতে বারণ করেছিলেন। লকেটের কথায়, ‘‘আমরা সকলেই ওঁকে দল ছেড়ে যেতে বারণ করেছিলাম। বুঝিয়েওছিলাম। কিন্তু উনি সেটা শোনেননি।’’
জয়প্রকাশ-রীতেশের সঙ্গে লকেট-সহ অপর কয়েকজন ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতার ওই বৈঠক সম্পর্কে রাজ্য দলের কাছে খোঁজ নিয়েছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিল্লি বিজেপি-র স্পষ্ট প্রশ্ন— লকেট কি তৃণমূলে চলে যাবেন? ঘটনাচক্রে, লকেটকে নিয়ে ওই জল্পনা পুরভোট এবং পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। লকেট তখনও সেই জল্পনা নাকচ করেছিলেন। যেমন এখনও করছেন। এরই মধ্যে লকেটকে উত্তরাখণ্ডে ভোটের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে লকেট সেখানেই বেশি সময় ব্যয় করেছেন। উত্তরাখণ্ডে ভোটপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তিনি রাজ্যে ফিরেছেন এবং ফিরেই দলের অন্দরে সরব হয়েছেন। তার পরে ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ফলে তাঁকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
সেই জল্পনার অঙ্গ হিসেবেই বিজেপি-র রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটা অংশ মনে করছে, লকেট দলের উপর পরোক্ষে একটা ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছেন। বিজেপি-র এক রাজ্যনেতার কথায়, ‘‘উনি গত প্রায় একমাস রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রাখছেন না। সেই কারণেই ওঁকে নিয়ে আরও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দিল্লিও জানতে চাইছে।’’
বস্তুত, লকেট দলের অন্দরে (এবং কখনও কখনও প্রকাশ্যেও) ইদানীং যা বলছেন, তাতে তাঁকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হওয়ার কারণ যে রয়েছে, তা বিলক্ষণ জানেন বিজেপি নেতারা। সম্যক জানেন লকেটও। তিনি যে দলের নীতি পছন্দ করছেন না, তা-ও তিনি খোলাখুলিই জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। ফলে লকেট নিয়ে আলোচনা এবং জল্পনা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। সে কারণেই বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তাঁর বিষয়ে কৌতূহলি হয়েছেন।
দলের রাজ্যনেতাদের একাংশ মনে করছে, প্রয়োজনে এর পর কেন্দ্রীয় স্তরের নেতারা লকেটের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে সে বিষয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা নেই। লকেটের সঙ্গে কেন্দ্রীয়নেতারা কথা বললে তা নিয়ে হুগলির সাংসদের কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, তিনিও রাজ্যনেতৃত্বের সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করতে চান বলে খবর।