নিষ্প্রাণ: লকডাউনের জেরে উৎপাদন বন্ধ মেটিয়াবুরুজের পোশাক তৈরির কারখানায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ইদের আর বাকি এক সপ্তাহ। এ দিকে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশ জুড়ে প্রায় দু’মাস ধরে লকডাউন চলছে। আরও ১৪ দিন তা চলবে বলে রবিবারই ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। লকডাউন কবে পুরোপুরি উঠবে, বন্দর এলাকার ওস্তাগর, দর্জিদের কাছে তা এখনও অজানা। ইদের মুখে ব্যবসা বন্ধ থাকায় তাঁদের তো বটেই, মাথায় হাত বস্ত্র ব্যবসায়ীদেরও। অথচ, প্রতি বছর দুর্গাপুজো এবং ইদ ঘিরেই বেশি লাভের আশা করেন ওঁরা।
এ শহরে নতুন পোশাক তৈরির কারবার মূলত চলে বন্দর এলাকার মেটিয়াবুরুজ, রাজাবাগান, নাদিয়াল, মহেশতলা, বজবজ এবং আক্রায়। সেখানে প্রায় প্রতিটি ঘরেই চলে এই ব্যবসা। এমনকি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ আশপাশের জেলা থেকেও অনেকে বন্দর এলাকায় এসে দর্জির কাজ করেন। অনেকে আবার বরাত নিয়ে গিয়ে কাজ করেন বাড়িতে বসে। লকডাউনের ঘোষণা হতেই তাঁরা যে যাঁর ঘরে ফিরে গিয়েছেন। বন্ধ কারখানা।
সূত্রের খবর, বন্দর এলাকায় প্রায় দেড় লক্ষ ওস্তাগর রয়েছেন। যাঁদের অধীনে প্রায় চার লক্ষ দর্জি কাজ করেন। সব মিলিয়ে ওই এলাকায় বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার শুধু কাপড়ের ব্যবসা হয়। রাজাবাগানের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেনের কারখানায় ১০০ জন দর্জি কাজ করতেন। লকডাউন ঘোষণার পরপরই মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে আসা ওই দর্জিরা ফিরে গিয়েছেন যে যাঁর বাড়িতে। সাজ্জাদের কথায়, ‘‘দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা মানুষগুলি এখন বেকার। আমিও বেকার। ইদের আগের শেষ এক মাসে আমাদের সারা বছরের রোজগারের ৫০ শতাংশ হাতে আসে।’’ মোমিনপুরের বাসিন্দা আফতাব হোসেনের আক্রার পোশাক কারখানায় কর্মরত ১৪ জন দর্জিও লকডাউন ঘোষণা হতে জেলায় ফিরে গিয়েছেন। তাঁর চেতলা এবং মোমিনপুরে কাপড়ের দোকানে বিক্রি হয় নিজের কারখানায় তৈরি জামাকাপড়। আফতাবের আফশোস, ‘‘কারখানাই তো বন্ধ! এর উপরে আবার চতুর্থ পর্বের লোকডাউন ঘোষণা হল। ইদের ব্যবসা তো মার খেলই, দুর্গাপুজোর ব্যবসাতেও ধাক্কা খেলাম। কবে দোকান খুলতে পারব জানি না।’’
নাদিয়ালের বাসিন্দা, কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ মইনুল হক চৌধুরী আবার হাওড়া হাট সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদকও। তাঁর নিজের কারখানায় তিরিশটি সেলাই মেশিন রয়েছে। ৫০ জন দর্জি কাজ করতেন সেখানে। মইনুলের কথায়, ‘‘বেশির ভাগ মানুষ রমজান শুরুর আগেই ইদের কেনাকাটা সারেন। লকডাউনের জন্য এ বার ইদের সাত দিন আগেও ব্যবসার এই মন্দাদশা হবে, ভাবতে পারছি না।’’
বন্দর এলাকার ঘরে ঘরে তৈরি কাপড় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকি বিদেশেও রফতানি হয়। ছেদ পড়েছে সে সবে। এখান থেকে কাপড় যায় হাওড়ার মঙ্গলাহাটে। তা ছাড়া রবি এবং সোমবার মেটিয়াবুরুজেই কাপড়ের বহু পুরনো হাট বসে। সেই কারণে শনি ও রবি ওই তল্লাটে পা রাখা দায় হয়। এখন সব সুনসান।
বাংলা রেডিমেড গার্মেন্টস ম্যানুফাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আলমগির ফকির বলেন, ‘‘বন্দর এলাকায় বছরে কুড়ি হাজার কোটি টাকার কাপড়ের ব্যবসা হয়। যার বেশির ভাগই হয় ইদ এবং দুর্গাপুজোর আগে। করোনার জন্য বিপন্ন দর্জি, ওস্তাগর-সহ কাপড় ব্যবসায় জড়িত অসংখ্য মানুষ। লকডাউনের জেরে কয়েক লক্ষ দর্জি কাজ হারিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, দর্জিশিল্পীদের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করুক সরকার।”
রাজ্য সরকারের কাছে ওই তল্লাটের কাপড় ব্যবসায়ীদের আরও আবেদন, এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াক প্রশাসন। মেটিয়াবুরুজের বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘‘এখানকার মানুষের একমাত্র রুজি-রুটি এটা। বিপন্ন ওই মানুষগুলিকে সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখব।’’
আরও পড়ুন: চাপের মুখে কলকাতা ফিরছে উড়ান-চিত্রে