তৃণমূলের প্রকাশ করা ‘গোপন ভিডিয়ো’ ঘিরে শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামে এক সংগঠন। তার ঠিক আগের দুপুরেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের। প্রকাশ করা হল একটি ভিডিয়ো (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। কুণাল ঘোষ, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যদের আশঙ্কা, নবান্ন অভিযান থেকে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পদ্মশিবির। রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের সন্দেহ, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর নামে এই কর্মসূচি ডাকা হলেও, আসলে আড়াল থেকে এটির চালিকা শক্তি গেরুয়া শিবিরই।
সোমবার দুপুরে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দু’টি গোপন ভিডিয়োও প্রকাশ করেছে তৃণমূল। যদিও ওই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। সেখানে কাউকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “বডি চাই।” কেউ আবার বলছেন, “বডি পড়বেই। রাবার বুলেট চলবে।”
ভিডিয়ো প্রকাশ হতেই হইচই পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। বাম ও কংগ্রেস উভয় শিবিরই বিজেপিকে দুষছে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজনীতির রং লাগানোর অভিযোগে। সিপিএমের তরুণ নেত্রী দীপ্সিতা ধরের কথায়, “বিজেপি তরুণদের আবেগকে ব্যবহার করে রাজনীতির রুটি সেঁকতে চাইছে। আশা করব বিচারের দাবিতে মূল আন্দোলন অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থসিদ্ধি যাঁরা করতে চাইছেন তাঁরা বিচ্ছিন্ন হবেন।”
আরজি করের ঘটনার পর রাজ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ গড়ে উঠেছিল, তাতে রাজনীতির রঙ মেশানোর অভিযোগ তুলছে কংগ্রেস শিবিরও। প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজনীতি কখনও লাশকেন্দ্রিক হতে পারে না। যাঁরা এটি করতে চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। যাঁদের ‘বডি’ বানাতে চাওয়া হচ্ছে, তাঁদেরকেও প্রশাসন রক্ষা করুক।” তিনি বলেন, “বিজেপি বডির কথা বলে নজর ঘোরাতে চাইছে, আর তদন্ত খুন-ধর্ষণ থেকে দুর্নীতির দিকে চলে যাচ্ছে। বিজেপি ও তৃণমূল উভয়েই সমান।”
কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, সমাজমাধ্যমে লোক ক্ষেপিয়ে গন্ডগোলের চেষ্টা হচ্ছে। কিছু চক্র রয়েছে। তার মধ্যে বিজেপি, এবিভিপি ও আরএসএসের কিছু লোক এগুলিতে হাওয়া দিচ্ছেন। সিপিএম মনোভাবাপন্ন কিছু আন্দোলনকারী গোষ্ঠীও রয়েছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাইরের রাজ্য থেকেও নাশকতার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতীদের এ রাজ্যে প্রবেশ করানোর চেষ্টা হতে পারে। পুলিশের নকল পোশাক পরে গুলি চালানোর চেষ্টা হতে পারে বলেও আশঙ্কা কুণালের।
প্রসঙ্গত, কুণাল ঘোষদের প্রকাশ করা এই গোপন ভিডিয়োগুলির বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর অন্যতম মুখ সায়ন লাহিড়ীর সঙ্গে। তাঁর দাবি, “এ সব আমাদের কারও নয়। ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে হয়। তবে এগুলি থেকেই প্রমাণিত, সরকার তথা তৃণমূল আমাদের ভয় পাচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই জানিয়েছিলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযানে তিনি যোগ দেবেন। রাজনৈতিক পরিচয়কে দূরে সরিয়ে ‘ব্যক্তিগত’ ভাবেই তিনি শামিল হবেন বলে জানান। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও বক্তব্য ছিল, “এটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। সেখানে ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ যোগ দিতে পারেন।”
সোমবার তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, “আন্দোলন গতি পাওয়ায় তৃণমূল হতাশায় ভুগছে, তাই এমন অদ্ভুত আচরণ।”
যদিও বিজেপিকে পাল্টা সন্দেশখালির প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “সন্দেশখালিতেও বিজেপির নিকৃষ্ট রাজনৈতিক অভিসন্ধি ফাঁস হয়েছিল। এ বারেও এই ঘটনা ঘটল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মহিলাদের যে আস্থা, বিজেপি তাতে আঘাত করতে চায়। তাই তাদের এই নোংরা রাজনৈতিক নকশা।”