এই অটোয় মেলে পাপ্পুর দেহ। ফাইল চিত্র
মানিকতলায় এক যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠার এক দিন পরেও ঘটনার কিনারা করতে পারল না পুলিশ। ফলে ওই যুবককে আদৌ পিটিয়ে মারা হয়েছিল কি না, বা কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে— তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হয়নি। লালবাজারের তরফে এই ব্যাপারে মন্তব্য করা না হলেও পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখছেন তদন্তকারীরা। বুধবার রাত পর্যন্ত কয়েক জনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
বুধবার সকালে মানিকতলা মেন রোডের বসাকবাগানে রাস্তার ধারে দাঁড় করানো একটি অটো থেকে উদ্ধার হয় অমরনাথ প্রসাদ (৩৫) ওরফে পাপ্পু নামে এক যুবকের মৃতদেহ। ওই পাড়াতেই থাকতেন তিনি। তাঁর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ দিন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাপ্পুর দেহের ময়না-তদন্ত হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, তার চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও না এলেও প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃতের শরীরে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট।
বুধবারই বসাকবাগান এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা দাবি করেছিলেন, কাছেই গাঙ্গুলিপাড়া নামে একটি জায়গায় মঙ্গলবার রাতে মোবাইল চোর সন্দেহে পাপ্পুকে মারধর করা হয়। যার জেরে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে গাঙ্গুলিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। এক মহিলা দাবি করেন, “মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে পরের দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ওই যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে পাড়ার বাতিস্তম্ভে বেঁধে পেটানো হয়েছে। ভোরের দিকে তাঁকে তাঁর পাড়ায় গিয়ে ফেলে আসা হয়।’’ যদিও কারা মেরেছেন, সে কথা জানাতে চাননি তিনি।
ঘটনার তদন্তে নেমে ওই মহিলা-সহ আরও কয়েক জনকে মানিকতলা থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের দাবি, সকলেই বিষয়টি শুনেছেন বলে দাবি করলেও কারা ওই যুবককে মারধর করেছেন, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাতে পারেননি। এর পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসি ক্যামেরার খোঁজ শুরু করে পুলিশ। বেশ কিছু ফুটেজ পাওয়া গেলেও ঘটনাস্থলের কোনও সরাসরি ফুটেজ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “কিছু ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অত রাতে ওই পাড়ার সরু গলি দিয়ে অনেকে যাতায়াত করছেন। হাঁটাচলায় উত্তেজনার ছাপ ধরা পড়লেও সরাসরি কোনও ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না।’’ সে কারণে ওই পাড়া থেকে মানিকতলা মেন রোড ধরে বসাকবাগানের দিকে যাওয়ার রাস্তার ক্যামেরার ফুটেজ দেখছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেখান থেকে কোনও সূত্র মিললে তদন্তে সুবিধা হবে।
মৃত যুবকের বড়দা মহেশ প্রসাদ এ দিন বলেন, “দিনভর ঘটনাটি নিয়ে প্রচুর আলোচনা শুনলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। আমরা গরিব মানুষ। কী করে বিচার পাব, জানি না। অভিযোগ করলে পরে বিপদ হতে পারে ভেবেও ভয় পাচ্ছি।’’ কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের এক কর্তা অবশ্য ওই পরিবারকে আশ্বস্ত করে বলেন, “ভয়ের কিছু নেই। পরিবার অভিযোগ করলে অবশ্যই নেওয়া হবে। দ্রুত তদন্তে পুরো ঘটনা জানা যাবে।”