Baruipur

নীল বাতি জ্বলা গাড়ি থেকে উদ্ধার বস্তা বস্তা গাঁজা

বারুইপুর পুলিশ জেলা সূত্রে খবর, বুধবার ওড়িশার জলেশ্বর এলাকা থেকে পাচার হওয়া ১৫০ কেজি গাঁজা বারুইপুরের শঙ্করপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। ই এম বাইপাসের কামালগাজির কাছে একটি লাল গাড়ির মাথায় নীল রঙের আলো জ্বলছে। গাড়িটি চার দিক থেকে ঘিরে ফেলছে পুলিশের টহলদারি ভ্যান। পুলিশকর্মীরা গাড়ি থেকে চালক ও সওয়ারিদের জামা ধরে টেনে নামালেন। এর পরে গাড়ির ডিকি থেকে বেশ কয়েকটি বড় বড় বস্তা নামিয়ে তোলা হল পুলিশের ভ্যানে। নীল বাতির গাড়ি থেকে ধরা লোকজনকে জিপে উঠিয়ে নিল পুলিশ। গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে নরেন্দ্রপুর থানার দিকে চলে গেলেন পুলিশের চালক।

Advertisement

বারুইপুর পুলিশ জেলা সূত্রে খবর, বুধবার ওড়িশার জলেশ্বর এলাকা থেকে পাচার হওয়া ১৫০ কেজি গাঁজা বারুইপুরের শঙ্করপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময়ে ওই স্পেশ্যাল অপারেশন্স গ্রুপ ও নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গাঁজা আটক করে।

পুলিশ সূত্রের খবর, কৌশিক সামন্ত নামে হুগলির পুরশুড়া থানার বাসিন্দা এক গাড়িচালক নিজের গাড়িতে গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া স্টিকার লাগিয়ে নীল বাতি জ্বেলে জলেশ্বর থেকে দেড়শো কেজি গাঁজা বারুইপুরের শঙ্করপুর এলাকায় পাচার করছিল। ওই গাড়ি থেকেই জাহাঙ্গির মোল্লা ও গফফর মোল্লা নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গাঁজা পাচার চক্রের দুই পাণ্ডাকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানান, কৌশিক নিজের গাড়িতে সরকারি স্টিকার ও নীল রঙের বাতি জ্বেলে জলেশ্বর থেকে নিয়মিত বারুইপুরে গাঁজা পাচার করত। সরকারি স্টিকার, নীল বাতি থাকায় রাস্তায় পুলিশি তল্লাশির সামনে পড়তে হয় না।

তদন্তকারীরা আরও জানান, গত ছয় মাসে চার বার জলেশ্বর থেকে গাজা গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে এসে বারুইপুরে জাহাঙ্গির ও গফফরকে পৌঁছে দিয়েছে কৌশিক। তাদের থেকে জলেশ্বর থেকে বারিকুল গাঁজা পৌঁছনো বাবদ প্রতিবার ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে কৌশিক।

সপ্তাহখানেক আগে এক সূত্র মারফত পুলিশ জানতে পারে ওড়িশার সীমান্ত এলাকা জলেশ্বর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় গাঁজা পাচার করা হচ্ছে। এর পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারুইপুর থানার শঙ্করপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গির ও গফফরই পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা। এর পরেই ওই দু`জনের উপরে নজরদারি শুরু হয়। বুধবার সকালে তারা একটি গাড়ি নিয়ে এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। তবে জাহাঙ্গিরের মোবাইলে আড়িপাতা শুরু করেন স্পেশ্যাল অপারেশন্স গ্রুপের অফিসারেরা। ঘন্টাখানেক পরে থেকেই কৌশিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলা শুরু করে জাহাঙ্গির। ফোনালাপের সূত্র ধরেই জলেশ্বর থেকে গাঁজা কিনে বাড়ি ফেরার পথে কামালগাজি এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘দেড়শো কেজি গাঁজার বাজার মূল্য নয় লক্ষ টাকা। বুধবার জলেশ্বরে নগদ আট লক্ষ টাকা দিয়ে এসেছে ধৃতেরা। বাকি এক লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করার কথা ছিল।’’

সম্প্রতি মদের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে গাঁজার প্রচুর চাহিদা বেড়েছে বলে ওড়িশা থেকে এ রাজ্যে গাঁজা পাচার শুরু করা হয়েছে বলে দাবি স্পেশ্যাল অপারেশন্স গ্রুপের তদন্তকারী অফিসারদের।

ওড়িশার গাঁজার চাহিদা বাজারে সব থেকে বেশি। কারণ দামে সস্তা এবং গুণমান অনেক ভাল। গত কয়েক মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার গাঁজা ওড়িশা থেকে কৌশিকের মাধ্যমে বারুইপুরে নিয়ে এসেছে জাহাঙ্গির ও গফ্ফর, দাবি তদন্তকারীদের। বারুইপুর থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় গাঁজা পাচার করত জাহাঙ্গির ও গফফর। ধৃতদের বিরুদ্ধে মাদক পাচার আইনের ধারায় মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement