প্রতীকী চিত্র
ঘরের চৌকি আর একচিলতে বারান্দার যেখানে পড়ে ছিলেন প্রৌঢ়, তার মাঝের দূরত্ব সাড়ে তিন ফুট। এবং একটি পাপোশ। তদন্তকারীদের নজরে আপাতত এই দু’টি বিষয়। ট্যাংরার ডি সি দে রোডে প্রৌঢ়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু আদতে খুন কি না, সেই তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, রবিবার রাতে যা ঘটেছে তা ওই সাড়ে তিন ফুট জায়গাতেই। সেই সঙ্গে পুলিশকে ভাবাচ্ছে, প্রৌঢ় খুন হয়ে থাকলে তাঁর কোমরের নীচে থাকা পাপোশের ওই অবস্থান হত কি না।
সোমবার সকালে ডি সি দে রোডের একটি বাড়িতে বাবু দাস নামে বছর ষাটেকের এক প্রৌঢ় খুন হয়েছেন বলে ট্যাংরা থানায় খবর যায়। প্রৌঢ়ের স্ত্রী শোভাদেবী প্রথমে দাবি করেন, তাঁদের একমাত্র ছেলে রাজা দাস বাবাকে খুন করেছেন। পরে যদিও সেই দাবি থেকে সরে আসেন প্রৌঢ়া। বাণিজ্যে স্নাতক রাজা চাকরি না পাওয়ায় সংসারে অভাব ছিলই। লকডাউনে তা আরও বাড়ে। তার মধ্যে রোজ মত্ত অবস্থায় রাতে বাড়ি ফিরতেন রাজা। এ নিয়ে পরিবারে ঝামেলা লেগেই থাকত বলে শোভাদেবীর দাবি। ঘটনার রাতেও ওই অবস্থায় ফিরে তিনি মাকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করার হুমকি দিয়েছিলেন বলে জেনেছে পুলিশ। তাই রাতে তিনি অন্যত্র শুয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানান শোভাদেবী। পুলিশ রাজাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে পুলিশ যখন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় তখন রাজা ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন। কেউ খুন করে কি ঘরে ঘুমিয়ে থাকতে পারেন? এখানেই ধন্দ পুলিশের।
তদন্তে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন অসুস্থ ওই প্রৌঢ় চলাফেরার শক্তি হারিয়েছিলেন। শীর্ণকায় চেহারা নিয়ে দু’হাতে ভর করে মাটিতে ঘষটে সামনের দিকে চলার চেষ্টা করতেন তিনি। এ ছাড়া শৌচকর্মের জন্য ছেলেই তাঁকে কোলে করে নিয়ে যেতেন। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, প্রৌঢ়ের পাঁজরের দু’টি হাড় ভাঙা। ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক জানান, ওই প্রৌঢ়ের হাড়ের অবস্থা এমনই যে সামান্য আঘাতেই তা ভাঙবে। ঘুষি বা লাথি মারলে
পাঁজরের আরও হাড় ভাঙার কথা। এ ক্ষেত্রে হাড় দু’টি কী করে ভেঙেছে সেটাও প্রশ্ন।
সে কথা মাথায় রেখে রাজাকে জেরা করে ও ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখে তদন্তকারীদের প্রশ্ন, যদি ছেলের আঘাতেই প্রৌঢ়ের পাঁজরের হাড় ভেঙে থাকে, তা হলে আরও হাড় ভাঙবে। তবে কি দু’হাতে ভর করে ঘষটে এগোতে গিয়ে দরজার পাশে কোথাও আঘাত পেয়েছিলেন প্রৌঢ়?
সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ পাপোশের অবস্থান। এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক বলেন, “এই ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাপোশের অবস্থান। প্রৌঢ়কে যদি খুন করে বারান্দায় এনে শোয়ানো হয় বা বারান্দায় আছড়ে ফেলে খুন করা হয়, তা হলে অনেক বেশি হাড় যেমন ভাঙত, তেমনই পাপোশের ওই অবস্থান হত না। ওই পাপোশটি থাকে ঘরের দরজার সামনে। কিন্তু পুলিশ যখন দেহ উদ্ধার করতে যায় তখন সেই পাপোশ দরজা থেকে কিছুটা এগিয়ে প্রৌঢ়ের কোমরের ঠিক নীচে পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রৌঢ় হাতে ভর করে ঘরের বাইরে যাওয়ার সময়ে হয়তো পাপোশটিকেও ছেঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর পরে
পাপোশ তাঁর কোমরের নীচেই থেকে যায়।” তবে ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগে কিছুই বলা সম্ভব নয় বলেও ওই তদন্তকারীর দাবি। ওই রিপোর্ট এলে এ-ও বোঝা যাবে, প্রৌঢ়ের পাঁজরের হাড় রবিবার রাত থেকে সকালের কোনও সময়ের মধ্যে ভেঙেছিল, নাকি তার আগে? তদন্তকারী আরও জানান, এই ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়া যাওয়ায় রাজাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রৌঢ়ের ছেলে রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমি খুন করলে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকতাম না। পুলিশ সত্যিটা বার করুক।”