পুলিশি সূত্রের খবর, বছর শেষের আগে মাদকের কারবার আটকাতে ‘সাইবার সার্ভেল্যান্স’ বাড়াচ্ছে লালবাজার। প্রতীকী ছবি।
বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে শহরে হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে বিদেশি পণ্য আনানোর ঝোঁক। বিদেশি জার্সি থেকে শুরু করে খেলার নানা ধরনের সরঞ্জাম আনাচ্ছেন অনেকেই। আর সেই সব পণ্যের আড়ালে বিদেশ থেকে মাদকও আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন লালবাজারের কর্তারা। বছর শেষের আগে আপাতত এটাই বড় চিন্তা পুলিশকর্তাদের। সেই কারণে শহরের পানশালাগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন কুরিয়র সংস্থাকেও সতর্ক করেছে লালবাজার। সেই সঙ্গেই চলছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা।
বছর শেষ হতে এখনও মাস দেড়েক বাকি। প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায়, বড়দিন ও বর্ষবরণের উৎসবের আবহে মাদকের রমরমা বেড়ে যায় শহরে। এ বার যাতে তা না ঘটে, তার জন্য আগে থেকেই নজরদারি শুরু করেছেকলকাতা পুলিশের মাদক-বিরোধী বিভাগ। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বার চিন্তাটা বেশি। কারণ, বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই শহরে বিদেশি পণ্যের আমদানি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বারই বিশ্বকাপ ঘিরে এমন উন্মাদনা তৈরি হয়। বিভিন্ন কুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে শহরে ঢোকে নানা ধরনের জিনিসপত্র। আর তাতেই বছর শেষের আগে চিন্তায় লালবাজারের পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, ওই সব জিনিসপত্রের আড়ালেই মাদক পাঠানো হতে পারে বিদেশ থেকে। যা আটকানো খুবই কঠিন। তাই কুরিয়র সংস্থাগুলিকে বার বার সতর্ক করছেন তাঁরা।
কুরিয়র সংস্থাগুলির অবশ্য দাবি, এ ক্ষেত্রে তাদেরও হাত-পা অনেকটাই বাঁধা। কারণ, পার্সেল খুলে ভিতরে কী আছে, তা দেখার অধিকার তাদের নেই। তাদের কাজ শুধু নির্দিষ্ট ঠিকানায় পণ্য পৌঁছে দেওয়া। তাই ভিতরে মাদকের পুরিয়া থাকলেও তা তাদের জানার কথা নয়।
তা হলে উপায়?
পুলিশি সূত্রের খবর, বছর শেষের আগে মাদকের কারবার আটকাতে ‘সাইবার সার্ভেল্যান্স’ বাড়াচ্ছে লালবাজার। মাদকের কারবারিরা ‘ডার্ক ওয়েব’ ব্যবহার করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। নজরদারির পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির পুরনো পথে হাঁটার পরিকল্পনাও করেছে কলকাতা পুলিশ।
বছর শেষের আগে শহরের বিভিন্ন হোটেল ও নাইট ক্লাবে ভিড় বাড়ে। সেই সঙ্গে রাত বাড়লেই বহু জায়গায় শুরু হয়ে যায় ‘রেভ পার্টি’। সেখানে মোচ্ছবের আড়ালে দেদার চলে গাঁজা, কোকেন, হেরোইন থেকে শুরু করে আলপ্রাজ়োলাম, ফেনমেট্রাজিনের মতো মাদকের ব্যবহার। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর শেষের আগে শহরের বিভিন্ন পানশালা ও ডিস্কোথেকের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক প্রচারও চালানো হবে।
কলকাতা পুলিশের মাদক-বিরোধী বিভাগের এক আধিকারিক জানালেন, মাদক পাচার সংক্রান্ত একাধিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, পাচারের মাধ্যম হিসাবে কুরিয়র পরিষেবাকে ব্যবহার করা হয়েছে। কখনও খেলার পুতুলের ভিতরে, কখনও বা দামি প্রসাধনী দ্রব্যের আড়ালে পাঠানো হয়েছে মাদক। কখনও বা ব্যবহার হয়েছে ডার্ক ওয়েবের। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের নজর এড়াতে মাদকের কারবারিরা কখন কোন পথ নেবে, তা আগে থেকে বলা মুশকিল। তবে সতর্ক না হলে বিপদ।’’ লালবাজারের আর এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘মাদকের বিরুদ্ধে সারা বছরই অভিযান চালানো হয়। এমনকি, বিভিন্ন সময়ে নানা সোর্সের সাহায্যও নেওয়া হয়। উৎসব-পার্টির মরসুমে সেই কাজটাই বেড়ে যায় কয়েক গুণ।’’