police

Police: ফোনের সূত্র ধরে দু’বোনকে পড়াশোনায় ফেরাল পুলিশ

দুই বোনের পড়াশোনা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন সোনারপুর থানার আধিকারিকেরা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনাকালে যে মোবাইলের ভরসায় অনলাইন ক্লাস করত দুই বোন, সেই মোবাইলটিই ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল এক দিন। চুরি যাওয়া সেই মোবাইল উদ্ধারের সূত্র ধরে কলেজ ও স্কুলছুট ওই দুই বোনকে আবার লেখাপড়ার জগতে ফিরিয়ে আনল পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, দুই বোনের পড়াশোনা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন সোনারপুর থানার আধিকারিকেরা।

Advertisement

মাস তিনেক আগে সোনারপুর থানার সুভাষগ্রাম এলাকার বাসিন্দা, ইতিহাসের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর মোবাইল ছিনতাই হয়। বছর দুয়েক আগে লকডাউনের সময়ে চাকরি গিয়েছিল ওই কলেজছাত্রীর বাবার। ফলে সংসারের হাল ধরতে সোনারপুরের একটি আবাসনে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে যোগ দেন ছাত্রীটি। মাস দুয়েক আগে সেখান থেকে সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথেই তাঁর ব্যাগ ছিনতাই হয়। সেই ব্যাগে ছিল তাঁর মোবাইল। ওই ঘটনায় সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি।

সম্প্রতি কয়েক জন ছিনতাইবাজকে গ্রেফতার করে তাদের থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করেছিল সোনারপুর থানা। তার মধ্যে ছিল ওই ছাত্রীর ফোনটিও। ফোন নিতে ওই ছাত্রীকে এর পরে থানায় ডাকা হয়। সোনারপুর থানার আইসি সঞ্জীব চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ফোনটি হাতে পেয়ে মেয়েটি হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন। প্রশ্ন করে জানতে পারি, করোনার কারণে এমনিতেই কলেজ বন্ধ ছিল। কিন্তু সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। মোবাইলের মাধ্যমেই তিনি ও তাঁর ছোট বোন অনলাইন ক্লাস করতেন। কিন্তু ফোন ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়।’’

Advertisement

ওই ছাত্রী জানান, বাবার চাকরি চলে যাওয়ায় দু’বোনের পড়াশোনা করা আর হয়ে উঠবে না বলেই ভেবেছিলেন তাঁরা। তবু ওই মোবাইলের মাধ্যমেই নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতেন। সম্প্রতি স্কুল ও কলেজ খুলে গেলেও উপার্জনের তাগিদে এখন আর কলেজে গিয়ে লেখাপড়া করা হয়ে উঠবে না তাঁর। তাই ফোন ফিরে পেয়েও হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।

সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘এর পরেই আমরা ঠিক করি, ওই দু’বোনের পড়াশোনার বিষয়টির দিকে আমরাই নজর রাখব। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, দুই বোনই অত্যন্ত মেধাবী। কিন্তু সংসারে চরম আর্থিক অনটন রয়েছে। তাই চাকরি করার পাশাপাশি ওই তরুণী যাতে ফের কলেজে যেতে পারেন এবং তাঁর বোনও স্কুলে ফিরতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

কী ভাবে সাহায্য করবে পুলিশ? সোনারপুর থানার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কলেজপড়ুয়া ওই তরুণীকে কোনও মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সে জন্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেও পড়াশোনা চালাতে পারবেন ওই তরুণী। আর তাঁর বোন, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটিকেও স্কুলে পাঠানো হবে। দু’বোনের লেখাপড়া সংক্রান্ত সমস্ত খরচই বহন করবেন সোনারপুর থানার আধিকারিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement