Kali Puja 2023

কালীপুজোর ‘বড়’ পরীক্ষায় আজ মানুষের সচেতনতাই ভরসা পুলিশের

কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, পুজোর দিন, সকাল ৭টা থেকে ১১টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাউন্ড বক্স এবং মাইক বাজানোয় ছাড় থাকবে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৩
Share:

নজরদারি: নিষিদ্ধ বাজি আটকাতে তল্লাশি পুলিশের। শনিবার, জিঞ্জিরাবাজারে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

পুলিশে এত দিন একটা কথা প্রচলিত ছিল।— আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ‘বড় পরীক্ষা’ হল দুর্গাপুজো। বাকি সবই ‘ক্লাস টেস্ট’! কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই হিসাব বদলে গিয়েছে অনেকটাই! বাহিনীর সদস্যেরাই এখন দাবি করেন, কালীপুজো এবং তার পরের দিন মিলিয়ে যে মাত্রায় চ্যালেঞ্জ থাকে, দুর্গাপুজোর পাঁচ দিনও তার ধারেকাছে যায় না। মূলত যান নিয়ন্ত্রণ আর ভিড়ের ডিউটি করলেই চলে দুর্গাপুজোয়। সেখানে কালীপুজোয় শব্দ-তাণ্ডব, বাজির তাণ্ডব, চাঁদার জুলুম, মারামারি রুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বড় দায়িত্ব নিতে হয়। তাই দুর্গাপুজো যদি হয় মাধ্যমিকের টেস্ট, তা হলে কালীপুজো অবশ্যই জীবনের ‘বড় পরীক্ষা’ মাধ্যমিক। আজ, রবিবার সেই বড় পরীক্ষাতেই বসতে চলেছে পুলিশ। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকেই পাড়ায় পাড়ায় উৎসব যাপনের নামে যা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ, তাতে বেশ কঠিন প্রশ্নের মুখেই পুলিশকে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

Advertisement

লালবাজারের কর্তারা যদিও প্রস্তুতি চূড়ান্ত বলেই দাবি করছেন। প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশকর্মী নামছেন শহর পাহারা দিতে। থাকছেন ডিসি এবং এসি পদমর্যাদার প্রায় ৫৬ জন অফিসার। আজ সকাল থেকেই নিয়ম মানাতে কড়া হাতে পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তাঁরা। শনিবারও এ নিয়ে তাঁদের তৎপরতায় কমতি ছিল না। অতীতের কয়েক বছরের চ্যালেঞ্জকে মাথায় রেখে এ বার আলাদা করে শহরের বহুতলগুলিতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকেই চিহ্নিত কিছু বহুতলের ছাদে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্র এবং শনিবার বিভিন্ন আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেছে পুলিশ। যখন-তখন বাজি না ফাটানো এবং ছাদে ওঠার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের কথা জানানো হয়েছে তাঁদের। এলাকায় কতগুলি বসত বহুতল রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করে সেগুলিতে বাজি ফাটানোর জন্য আলাদা জায়গা চিহ্নিত করা রয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে থানার ওসি-দের। কিন্তু তা সত্ত্বেও দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার এক পুলিশ আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘এর পরেও রোখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। এলাকায় যত আবাসন রয়েছে, সব ক’টির ছাদে নজর রাখতে হলে সেনাবাহিনী নামাতে হয়! পুলিশে এত লোক কোথায়? একটি ছাদে কারা বাজি ফাটিয়েছে, সেখানে উঠে তা ধরতে ধরতেই আর একটি ছাদে বাজি ফাটানো শুরু হয়ে যায়!’’

প্রায় একই রকম পরিস্থিতি সাউন্ড বক্স বা মাইক বাজানোর ক্ষেত্রেও। কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, আজ, পুজোর দিন, সকাল ৭টা থেকে ১১টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাউন্ড বক্স এবং মাইক বাজানোয় ছাড় থাকবে। আগামী কাল ছাড় থাকবে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এর
বাইরে জরুরি ঘোষণার জন্য মাইক ব্যবহার করা যাবে। নিয়মভঙ্গ হলেই কলকাতা পুলিশ আইনের ৪৩ডি এবং ক্যালকাটা সাবার্বান পুলিশ আইনের ১৭ডি ধারায় মামলা করা হবে। এর পাশাপাশি, বিস্ফোরক আইনে মামলা করারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখা হয়েছে বেআইনি বাজি ব্যবহারের জন্য ধরা পড়লে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং আদালত বাজি ফাটানোর যে সময় বেঁধে দিয়েছে, তার বাইরে ফাটালেও একই রকম পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন নগরপাল। যদিও পূর্ব কলকাতার একটি থানার এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘শুক্রবার রাত থেকেই ঠাকুর মণ্ডপে আনার নামে রাস্তায় যা চলছে, তাতে কালীপুজোর রাতে কান পাতা গেলে হয়! বহু জায়গাতেই তারস্বরে বক্স বাজিয়ে প্রতিমা আনতে যাওয়া হচ্ছে। কাল রাত থেকেই পাড়ায় পাড়ায় মাইক বেজেছে মধ্যরাত পর্যন্ত।’’ এর পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা এমন এক উৎসব, যেখানে কড়া হওয়ারও বিশেষ জায়গা নেই। শহরে এত বেশি সংখ্যায় পুজো হয় যে, বাহিনীতে কুলিয়ে ওঠার মতো লোক নেই।’’

Advertisement

তা হলে উপায়? ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল কলকাতার নগরপালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘কে কী বলছেন, বলতে পারব না। পুলিশ তৈরি রয়েছে। তবে, সাধারণ মানুষকেও সচেতন ভাবে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। সকলে মিলে চেষ্টা করলেই সুষ্ঠু উৎসব পালন সম্ভব।’’ এই অনুরোধে কি কাজ হবে? উত্তর মিলবে আর কয়েক ঘণ্টাতেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement