—প্রতীকী ছবি।
পিএইচ ডি-র আসন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা হাতানোর অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করল সিঁথি থানার পুলিশ। মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনায় কলকাতার বাসিন্দা এক ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে আসন বিক্রি বাবদ মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় অভিযুক্তেরা ব্যবহার করেছিলেন ভুয়ো নথি ও স্ট্যাম্প। শিক্ষা ক্ষেত্রে চাকরি বিক্রির অভিযোগ ঘিরে রাজ্য জুড়ে যখন শোরগোল চলছে, সেই সময়েই গত এপ্রিলে এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। এর পরে তদন্ত চালিয়ে চলতি মাসে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতেরা একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। এর পিছনে আরও অনেকের হাত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ধৃতদের মধ্যে পিন্টু রানা নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয় গত ৫ তারিখ। তিনি আপাতত পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। আজ, শুক্রবার তাঁকে ফের আদালতে তোলার কথা। পিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই গ্রেফতার করা হয় মণিগ্রীব বাগ নামে আরও এক জনকে। পেশায় শিক্ষক মণিগ্রীব আদালতে নিজের অসুস্থতার কথা জানান। পুলিশও জেল হেফাজতের আবেদন করে। এর পরে শারীরিক কারণে মণিগ্রীবকে জামিন দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, গত এপ্রিলে অভিযোগটি করেছিলেন শুভঙ্কর মান্না নামে কলকাতার বাসিন্দা এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৮ সালে এমবিএ করেন তিনি। সেখানে পড়াতেন মণিগ্রীব। ওই শিক্ষকই এক দিন জানতে চান, শুভঙ্কর পিএইচ ডি করতে ইচ্ছুক কি না। অভিযোগ, এর পরে তিনি পিন্টু রানা নামে এক জনের সঙ্গে শুভঙ্করকে যোগাযোগ করতে বলেন। বলা হয়, পিন্টু ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কর্মী। মণিগ্রীব নিজেও ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচ ডি করেছেন বলে দাবি করেন। সন্দেহ না হওয়ায় এবং স্যর বলছেন বলে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে পিএইচ ডি করতে পিন্টুকে ৭০ হাজার টাকা দেন শুভঙ্কর। নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে মণিগ্রীব শুভঙ্করকে একটা রসিদ দেন। এর পরে শুভঙ্করের স্ত্রীকেও সেখানেই একটি আসন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে আরও ৭০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকার আর রসিদ দেওয়া হচ্ছিল না। এর পরেশুভঙ্কর মেদিনীপুরের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, পিন্টু বা মণিগ্রীবের কেউই সেখানে যুক্ত নন। এর পরেই এফআইআর দায়ের করা হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাতেই বেরিয়ে আসে, শুভঙ্করকে দেওয়া রসিদ ভুয়ো। তাতে যে স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও নকল। এর পরেই পুলিশ পিন্টুকে গ্রেফতার করে। এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, ‘‘পিন্টুকে জেরা করেই মণিগ্রীবের ভূমিকা সামনে আসে। তাঁকেও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই চক্রের সঙ্গে আরও বেশ কিছু লোক জড়িত থাকতে পারে। বেশ কয়েকটি জায়গায় হানা দেওয়া হয়েছে। প্রচুর নথিপত্রও উদ্ধার হয়েছে।’’
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘পুলিশ এসে নথিপত্র যাচাই করে গিয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কর্মী যে হেতু এর সঙ্গে যুক্ত নন, তাই আলাদা করে আমাদের কিছু করার নেই। তবে, সব পক্ষকেই এ সব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’’