পুলিশকে রাস্তায় লাথি, সপাটে চড়

পিছমোড়া করে এক পুলিশ অফিসারের হাত ধরে রেখেছে এক যুবক। আর সামনে থেকে দুই যুবক তাঁকে মেরে চলেছে। কখনও চড় মারছে। কখন আবার ধাক্কা ও লাথি মারছে ওই অফিসারকে। সঙ্গে চলছে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ। হুমকি দিচ্ছে, প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরে ওঠবোস করতে হবে ওই অফিসারকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাজরা ও লেকটাউন শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০৩
Share:

পিছমোড়া করে এক পুলিশ অফিসারের হাত ধরে রেখেছে এক যুবক। আর সামনে থেকে দুই যুবক তাঁকে মেরে চলেছে। কখনও চড় মারছে। কখন আবার ধাক্কা ও লাথি মারছে ওই অফিসারকে। সঙ্গে চলছে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ। হুমকি দিচ্ছে, প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরে ওঠবোস করতে হবে ওই অফিসারকে।

Advertisement

আবার পথচারীকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে বলছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। বলা মাত্রই সটান থাপ্পড় এসে পড়ছে তাঁর গালে।

সিনেমার দৃশ্য নয়। দু’টি ঘটনাই রবিবার রাতের শহরের। প্রথমটিতে হাজরা মোড়ের কাছে নিগৃহীত হয়েছেন এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। দ্বিতীয়টিতে লেক টাউনে প্রকাশ্যে হেনস্থার শিকার এক এএসআই। দু’টি ঘটনাতেই আরও জোরালো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন। একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ‘গৌরবের মুকুটে’ নতুন পালক জুড়েছে। পুলিশেরই অনেকে বলছেন, কর্তব্যপালনে গিয়ে নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা মহানগরে নতুন কিছু নয়। কখনও সাধারণ মানুষ, কখনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের হাতে হেনস্থা হচ্ছেন আইনরক্ষকেরাই। এ বার হাজরা মোড়ের ঘটনাটি বাড়তি মাত্রা পেয়েছে ধৃতদের হয়ে বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ানোয়, ঘটনাচক্রে যিনি তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান।

Advertisement

এর আগে আলিপুর-কাণ্ড থেকে শ্যামপুকুর থানায় হামলার ঘটনা, অভিযোগের তির ছিল শাসক দলের কর্মীদের দিকে। প্রতিটি ঘটনাতেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে গুটিয়ে গিয়েছে পুলিশ। যেমন আলিপুর আদালত চত্বরে পুলিশকর্মীকে নিগ্রহের চার দিন পরেও কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। হাজরা মোড়ের ঘটনায় অবশ্য অভিযুক্তদের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র মেলেনি। অফিসারের ওই পরিস্থিতি দেখে ঘটনাস্থলে থাকা দুই হোমগার্ড কালীঘাট থানায় খবর দেন। থানার অফিসারেরা গিয়ে তিন জনকে পাকড়াও করেন। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম রাহুল গাঁধী, জামিন গাঁধী এবং অভিজিৎ দে। তাদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিশ।

সোমবার ধৃতদের আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাদের হয়ে সওয়াল করেন বৈশ্বানরবাবু। আদালতে তিনি বলেন, ঘটনার তদন্তের জন্য ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তদন্তেও অভিযুক্তেরা সব রকম সহযোগিতা করবেন। সরকার পক্ষ অবশ্য ধৃতদের জেল হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানায়। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক ধৃতদের জামিনে মুক্তি দেন।

শাসক দলের বরো-চেয়ারম্যান হয়ে কর্তব্যরত পুলিশকে মারধরে অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করছেন কেন? বৈশ্বানরের জবাব, ‘‘পেশার খাতিরেই অভিযুক্তদের আইনজীবী হিসেবে দাঁড়িয়েছি। এর মধ্যে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই। দল বিষয়টি জানে।’’

কী ঘটেছিল ওই রাতে?

লালবাজার সূত্রের খবর, রাত ৮টা নাগাদ হাজরা রোডে কর্তব্যরত ভবানীপুর ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট অনির্বাণ মাঝি ওয়াকিটকিতে খবর পান, একটি লাল রঙের গাড়ি বেপরোয়া গতিতে সিগন্যাল ভেঙে হাজরা মোড়ের দিকে যাচ্ছে। হাজরা মোড়ের আগে ওই গাড়িটিকে আটকাতে যান ওই অফিসার। তাঁকে দ্রুত গতিতে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ওই গাড়িটি। শেষে গাড়িটিকে হাজরা মোড়ের কাছে আটকান ট্রাফিক গার্ডের দুই কর্মী। সেখানে পৌঁছে যান অনির্বাণবাবুও। গাড়ির চালক রাহুলের কাছে গাড়ির নথি দেখতে চান তিনি। নথি দেখাতে অস্বীকার করে সার্জেন্টের সঙ্গে পাল্টা তর্ক জোড়ে রাহুল। খবর দেয় পরিবারের সদস্যদের।

লেকটাউনের ঘটনায় ধৃত শুভজিৎ জানা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

পুলিশ জানায়, রাহুলের দাদা জামিন ও বন্ধু অভিজিৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই অফিসারকে প্রথমে গালিগালাজ করে। তার পরে অনির্বাণের হাত পিছন থেকে টেনে ধরে এক অভিযুক্ত। বাকিরা তাঁকে চড় মারতে থাকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘শুধু মারধর নয়, প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরে ওঠবোস করার কথাও বলছিল অভিযুক্তেরা।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, মারধর ও হুমকি চলার সময়েই খবর পেয়ে কালীঘাট থানার বাহিনী পৌঁছে তিন জনকে পাকড়াও করে ফেলে। ওই সার্জেন্টকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল টালিগঞ্জ থানার আওতায় পড়ে যাওয়ায় ধৃতদের ওই থানার হাতে তুলে দেন কালীঘাটের অফিসারেরা।

রবিবার রাতে লেকটাউনেও একই ভাবে মার খেয়েছে পুলিশ। সেখানে অবশ্য বেপরোয়া গাড়ি নয়, পথচারীকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে বলাতেই প্রকাশ্যে গালে থাপ্পড় পড়ে এক এএসআইয়ের। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় কৈখালির সর্দারপাড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ জানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুভজিৎ লেকটাউনে সিনেমা দেখতে যাচ্ছিল। তখনই নিয়ম ভেঙে ভিআইপি রোড পারাপারের চেষ্টা করায় তাকে কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ারেরা আটকান। সে বচসা জুড়লে সুরজিৎ মজুমদার নামে ওই এএসআই তাকে সামলাতে যান। অভিযোগ, সে সময়েই শুভজিৎ ওই পুলিশ অফিসারের গালে থাপ্পড় কষায়। তার পরেই ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার আদালতে তোলা হলে বিচারক শুভজিৎকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। যদিও শুভজিতের আইনজীবী রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁর মক্কেল মানসিক ভাবে অসুস্থ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement