মুক্তি: গাড়িতে তোলা হচ্ছে রকি ও টাইসনকে । মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দীর্ঘ দু’বছর পরে মুক্তির স্বাদ পেল রকি-টাইসন।
এত দিন খাঁচার ছোট্ট পরিসরেই দিন কাটছিল ওই দুই পোষ্যের। কিন্তু সেই বন্দিজীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি তারা। শরীর ভেঙে যাওয়া তো বটেই, এমনকি মানসিক অবসাদেও ভুগছিল তারা। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরে রটউইলার প্রজাতির ‘টাইসন’ ও ডোবারম্যান ‘রকি’র বন্দিদশা ঘোটাতে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের অধীনস্থ ‘দ্য ক্যালকাটা সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলিটি টু অ্যানিম্যালস’ (সিএসপিসিএ)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে একাধিক পশু সংস্থা। তার পরেই শনিবার শিয়ালদহ আদালতের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার তাদের পাঠানো হল মুকুন্দপুরের এক বেসরকারি পশু হাসপাতালে।
রকি-টাইসনের পরিবারের সদস্যেরা জেলে থাকায় তারা কোথায় থাকবে, তা নিয়ে বছর দুয়েক আগে মামলা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। তার পরে শিয়ালদহ আদালতের নির্দেশে, সিএসপিসিএ-র তত্ত্বাবধানে বন্দিজীবন কাটাচ্ছিল তারাও। তবে এ দিন মুক্তি পাওয়ার পরে আপাতত হাসপাতালে ঠাঁই পেয়েছে তারা। ওই হাসপাতালের তরফে রাধিকা বসু বলেন, ‘‘কোর্টের নির্দেশে মেনে ওদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন ওদের স্নান করানো হয়। আমাদের কর্মীরা ওদের খাইয়েছেন। আমি ওদের গায়ে হাত বোলাতেই ওরা এগিয়ে এসে আদর নিয়েছে। তবে ডোবারম্যানটির শারীরিক অবস্থা তুলনায় খারাপ। শীঘ্রই ওর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা শুরু হবে।’’
বাড়িতে মাদক মজুত-সহ শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাদক পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর ট্যাংরার মথুরবাবু লেনের বাসিন্দা জয়দেব দাসের বাড়িতে হানা দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। বাড়ির সিসি ক্যামেরায় পুলিশ আসছে দেখেই জয়দেব ও তার স্ত্রী গৌরী পুলিশের দিকে লেলিয়ে দেয় দুই পোষ্যকে। পুলিশ দরজা ভেঙে ঢুকতেই কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের এক কনস্টেবলের হাতে কামড় বসায় রকি। প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে লড়াই করার পরে পোষ্য দু’টিকে বাগে আনতে পেরেছিল পুলিশ। মাদক পাচার, পুলিশকে বাধা, কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগে জয়দেব, তার স্ত্রী ও মা-কে গ্রেফতার করে ট্যাংরা থানার পুলিশ।
সমস্যা শুরু হয় এর পরে। পরিবারের সকলে জেলে থাকায় পোষ্য দু’টি কোথায় থাকবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে পুলিশ। অবশেষে শিয়ালদহ আদালতের নির্দেশে দু’বছর ধরে সিএসপিসিএ-র তত্ত্বাবধানে ছিল তারা।
এ দিন সকালে রকি-টাইসনকে বিশেষ গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে চোখ ছলছল করে ওঠে সিএসপিসিএ-র সচিব সমীর শীল এবং পশু চিকিৎসক পলাশ সরকারের। সমীরবাবুর কথায়, ‘‘যে কোনও পোষ্যকে খাঁচাবন্দি রাখার বিরুদ্ধে আমরা বরাবর সরব। কিন্তু ঘটনা ও পরিস্থিতির চাপে, আদালতের নির্দেশে ওদের খাঁচায় রেখেছিলাম। ট্যাংরা থানা ওদের ভরণপোষণের জন্য মাসে হাজার পাঁচেক টাকা করে দিলেও বন্দিজীবনের যন্ত্রণা ওরা সহ্য করতে পারছিল না।’’
এ দিন সেখানে ট্যাংরা থানার পুলিশ আধিকারিক ছাড়াও ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের কর্মীরা। ট্যাংরা থানার সাব-ইনস্পেক্টরের কথায়, ‘‘জয়দেব ও তার পরিবারের পাশাপাশি রকি-টাইসনও আমাদের কাস্টডিতে রয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে আমরা বাধ্য।’’
তবে জয়দেবের কৃতকর্মের জন্য রকি-টাইসনকেও যে এ ভাবে দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে, সেটাই মানতে পারছেন না অনেকে।