ইকো পার্ক।
রাস্তার কুকুরের উপদ্রব হচ্ছে ইকো পার্কে। তাই দেখে সেখানে এ বার পোষ্য নিয়ে প্রবেশ করতে চাইছেন অনেকে। অনেকেরই দাবি, পোষ্যেরা রাস্তার কুকুরের থেকে নিরাপদ। যদিও ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত তেমন কোনও অনুমতি দেওয়া হবে না।
দর্শকদের ভিড়ে ইকো পার্কে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। অথচ সেখানে শহরের আর পাঁচটি পার্কের মতোই কুকুরের প্রবেশ নিষেধ। শীতের শহরে ইকো পার্ক এখন ভিড়ে ঠাসা। অনেকেই খাবার খাচ্ছেন পার্কে বসে। পার্কে বেড়াতে আসা লোকজনের অভিযোগ, এই অবস্থায় রাস্তার এই সব কুকুর কামড়ে দিলে বা খাবারে মুখ দিলে সেই দায়িত্ব পার্ক কর্তৃপক্ষ কী নেবেন?
হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের দাবি, ‘‘পার্কে কুকুর এখন প্রায় নেই বললেই চলে। পার্কে কুকুর ঢোকা আটকাতে অনেকগুলি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
কর্তৃপক্ষ যা-ই দাবি করুন, বাস্তবে ইকো পার্কে গিয়ে দেখা গেল দর্শকদের আশপাশে প্রচুর কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। অতীতে ইকো পার্কের ভিতরে কুকুরের কামড়ের ঘটনাও ঘটেছে।
চিল্ড্রেন্স পার্কের কাছে শতরঞ্চি বিছিয়ে বসেছিলেন বজবজ থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা অলোক সরকার। দুপুরের খাবার সঙ্গে এনেছিলেন তিনি। টিফিন বাক্স খুলতেই হাজির কুকুর।
একই অভিজ্ঞতা বারাসত থেকে স্বামী ও পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে আসা মৌমিতা সরকারের। মৌমিতা জানান, ছেলে কুকুর ভয় পায়। অথচ ইকো পার্কে তাঁরা যেখানে বসেছিলেন, সেখানে কুকুর উৎপাত করছিল।
এ সব দেখেই কুকুরপ্রেমীদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন পার্কে যদি রাস্তার কুকুর ঢুকতে পারে, তবে কেন বাড়ির পোষ্যকে পার্কে ঢুকতে দেওয়া হবে না?
হাজরা থেকে ইকো পার্কে আসা প্রসেনজিৎ দত্ত জানালেন, তাঁর বাড়িতে পোষা কুকুর আছে। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ইকো পার্কে বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু পোষ্যটিকে বাড়িতে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছেন। প্রসেনজিৎবাবু বলেন, ‘‘এখানে এসে দেখলাম পার্কে কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। তা হলে আমার কুকুরকে কেন বাড়িতে একা ফেলে আসতে হবে? রাস্তার কুকুরের তো টিকাকরণ হয় নি। আমার কুকুরের সব টিকা দেওয়া আছে।’’ তাঁর দাবি, কুকুর যদি এই পার্কে নিষিদ্ধ করতে হয় তা হলে রাস্তার কুকুর ঢোকাও বন্ধ করতে হবে। কুকুরপ্রেমীদের মতে, বিদেশে অধিকাংশ পার্কে কুকুর নিয়ে ঢোকার অনুমতি আছে। তা হলে এখানে কেন হবে না?
যদিও হিডকো চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়ে দিয়েছেন ইকো পার্কে কুকুর নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, ‘‘ইকো পার্কে ঢোকার মুখে নিরাপত্তারক্ষীরা কুকুর ঢুকে পড়ছে কি না নজর রাখছেন। সেই সঙ্গে ইকো পার্কের আশপাশে কুকুরের বংশবৃদ্ধি যেন না হয়, সে জন্য কুকুর ধরে টিকাকরণ করা হচ্ছে। পার্কের যে অংশে পাঁচিল নেই সেখানে কাঁটাতার এমন ভাবে দেওয়া আছে যেন কুকুর ঢুকতে না পারে। এ ছাড়া রান্না করে এনে পার্কে যেখানে সেখানে বসে খাওয়া দাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’’
দেবাশিসবাবুর মতে, বিদেশে পার্কে কুকুর নিয়ে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার কথা তিনি জানেন। কিন্তু সেখানে যাঁরা কুকুর নিয়ে আসেন, তাঁদের কুকুর পার্ক কোনওরকম নোংরা করলে তাঁরা নিজেরাই পরিষ্কার করে দেন। দেবাশিসবাবুর প্রশ্ন এখানে সেই অভ্যাসটা কী আছে?
শহরের রাস্তার কুকুর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন দময়ন্তী সেন নামে এক কুকুরপ্রেমী। দময়ন্তীর মতে, ‘‘পার্কে পোষা কুকুর নিয়ে ঢুকতে দেওয়া উচিত। কারও পোষা কুকুর পার্ক নোংরা করলে, মালিককেই তা পরিষ্কার করতে হবে এটা বাধ্যতামূলক করে দেখতে পারেন পার্ক কর্তৃপক্ষ। বিদেশের মতো এখানকার মানুষদেরও আস্তে আস্তে অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে।’’