Calcutta University

ক্যাম্পাসে পুজোর জেরে শাস্তির মুখে পাঁচ, ক্ষুব্ধ পার্থ

উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এ দিন সিন্ডিকেটের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমেই ওই শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১০
Share:

এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি

স্রেফ ‘টুম্পা সোনা’র জন্য শাস্তির মুখে পড়লেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজোর পাঁচ ‘উদ্যোক্তা’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্যাম্পাসে দু’বছরের জন্য তাঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন কর্তৃপক্ষ। তবে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, কর্তৃপক্ষ ঠিক কাজ করেননি। এটা অন্যায়। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্যের মত নিয়ে কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করবেন।

Advertisement

উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এ দিন সিন্ডিকেটের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমেই ওই শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য এ দিনের বৈঠকের কথা জানতেনই না। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত কী করে গৃহীত হল?’’ তাঁর দাবি, সিন্ডিকেট-সদস্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য, সুবোধ সরকার, শিলাদিত্য বসুরায় এ দিনের বৈঠকের খবরই পাননি।

যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন মণিশঙ্কর মণ্ডল, রনি ঘোষ, রাজা মেহেদি, দেবর্ষি রায় ও তীর্থপ্রতিম সাহা। এঁদের মধ্যে চার জন শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) নেতা। টিএমসিপি-র প্রাক্তন নেতা মণিশঙ্কর বর্তমানে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

Advertisement

সরস্বতী পুজো উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়া পড়ুয়ারা করোনা-বিধির তোয়াক্কা না-করে হাল আমলের ‘টুম্পা সোনা’ গানের সঙ্গে নেচেছিলেন বলে অভিযোগ। কর্তৃপক্ষ অনুমতি না-দিলেও টিএমসিপি-র সদস্য-সমর্থকেরা ওই পুজোর আয়োজন করেছিলেন। কোভিড পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারা আসছেন না। তাই পুজোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে উপাচার্য আগেই জানিয়েছিলেন। বর্তমানে ছাত্র সংসদ না-থাকায় পুজোর টাকা কর্তৃপক্ষ কাকে দেবেন, তা নিয়েও ধন্দ ছিল। তবে শিক্ষামন্ত্রী কোভিড-বিধি মেনে পুজো করা উচিত বলে জানিয়েছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজোর অনুমতি সরকার দিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় রাজি ছিল না। এটা সরকারের নীতি-বিরুদ্ধ। তাঁর মতে, কর্তৃপক্ষেরই উচিত ছিল কোভিড-বিধি মেনে পুজো করা। তিনি বলেন, ‘‘যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন হল, তার নিন্দা করেছি। কিন্তু ওই পাঁচ জনকে সতর্ক করে দেওয়া যেত। তা না করে ওঁদের ক্যাম্পাসে ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হল। এটা ঠিক কাজ বলে মনে করি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই পাঁচ জনকে তো আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেওয়া উচিত। সিন্ডিকেটের সব সদস্যের মতামত না নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কে দিল? আমি মনে করি, সদস্যদের সকলের মতামত নিয়ে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন।’’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও মিড-ডে মিল দিয়ে যাচ্ছি। আধিকারিকেরা অনেকে আসছেন। ওই চত্বরে বহু সভা হয়েছে। তখন তো কিছু হয়নি। সুতরাং এর মধ্যে কেউ রাজনীতির গন্ধ খুঁজে পেলে খুব ভুল হবে না।’’ এ কথা বলেই তিনি বলেন, ‘‘আমি অবশ্য এই বিতর্কে যাচ্ছি না। ছাত্রেরা এ সব বলছে। আমি বলেছি, তোমাদের ঠিক হয়নি এ কথা বলা।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে টিএমসিপি আয়োজিত পুজোয় রাজ্য সরকারের সাফল্যের কথাও তুলে ধরা হয়। কোথাও আবার কৃষি আইনের বিরোধিতাও ছিল পুজোর অনুষঙ্গ। কিন্তু গোল বাধে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ‘টুম্পা সোনা’র সঙ্গে নাচের কারণে। উপাচার্য জানিয়ে দেন, এই ঘটনার কঠোরতম তদন্ত হবে। তিনি জানিয়েছিলেন, অনুমতি ছাড়াই পুজো হয়েছে। যা হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। এ দিন তিনি জানান, তদন্ত কমিটির সুপারিশে সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যেরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে না ঘটতে সাহায্য করবে।

অভিযুক্ত রনি এ দিন বলেন, ‘‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ প্রথম সিমেস্টারের ছাত্র। সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জেনেছি, আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অথচ, এর আগে আমাকে শো-কজ করা হয়নি। এর বিরুদ্ধে আমি আদালতে যাচ্ছি।’’ মণিশঙ্কর বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু জানাননি। তাই এ বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement