Pain Killer

Drugs: ব্যথা ও উদ্বেগ কমানোর ওষুধেই মাদকের রমরমা

ব্যথার ওষুধ আর উদ্বেগ কমানোর ওষুধ নেওয়া হচ্ছে একসঙ্গে মিশিয়ে। কখনও আবার অত্যধিক মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে যে কোনও একটি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ব্যথার ওষুধ আর উদ্বেগ কমানোর ওষুধ নেওয়া হচ্ছে একসঙ্গে মিশিয়ে। কখনও আবার অত্যধিক মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে যে কোনও একটি। বাদ যাচ্ছে না নেশা ছাড়ানোর ওষুধও। গত কয়েক মাসে একাধিক ধরপাকড় চালিয়ে মাদক দমন শাখার তদন্তকারীদের দাবি, নেশার কারবারে এখন এ সবই ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ, পাইকারি বাজার থেকে নির্দিষ্ট গুদামঘর ঘুরে ওষুধগুলি পৌঁছে যাচ্ছে নেশাসক্তদের হাতে হাতে। কখনও ট্যাবলেটের আকারে, কখনও আবার ইঞ্জেকশনের ভায়ালে।

Advertisement

দিনকয়েক আগে কলকাতার নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরোর (এনসিবি) তদন্তকারীরা এমনই এক চক্রের হদিস পেয়েছিলেন বড়বাজার থেকে। সেখানকার পাইকারি বাজারের এমন একাধিক ওষুধ হাত বদলে চলে যাচ্ছিল তিলজলার একটি গুদামে। সেখান থেকেই তা খুচরো সামগ্রী হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছিল। নেশাসক্তদের অনেকেই সেই গুদাম থেকে ওষুধ কিনতে ভিড় করছিলেন বলে অভিযোগ। একটি সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে হানা দেন এনসিবি-র আধিকারিকেরা। গ্রেফতার করা হয় চার জনকে।

ওই ঘটনার তদন্ত যত এগিয়েছে, জানা গিয়েছে, বড়বাজারের একটি ওষুধ সংস্থা থেকে প্রচুর পরিমাণ ‘সাইকোট্রপিক’ এবং ‘নার্কোটিক’ ওষুধ বিক্রি করা হয়েছে বিনা কাগজপত্রে। দাম মেটানো হয়েছে নগদ টাকায়। ওই সংস্থারই এক কর্মী ওই সমস্ত ওষুধ কিনে তা পৌঁছে দিতেন তিলজলার গুদামে। ওষুধ সংস্থার মালিক জানতেন গোটা বিষয়টি। গুদামে যাঁরা ওষুধ কিনতে আসতেন, তাঁদের মধ্যেই এক নেশাসক্তকে গ্রেফতার করার পরে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এর পরেই শহরে ওষুধের পাইকারি বাজারগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়। এ বিষয়ে সতর্ক করা হয় কলকাতা পুলিশের মাদক দমন শাখার তদন্তকারীদের। গত দু’দিনে এমন একাধিক ওষুধ সংস্থায় গিয়ে তদন্তকারীরা কাগজপত্র দেখতে চেয়েছেন বলে খবর। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা নতুন কোনও বিষয় নয়। এমন ওষুধ বিভিন্ন হাত ঘুরে মাদক কারবারিদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বলে মাঝে মাঝেই অভিযোগ পাওয়া যায়। বহু ক্ষেত্রেই মাদকের থেকে এমন ওষুধ সহজলভ্য হয়ে দাঁড়ায়।’’

Advertisement

লালবাজারের মাদক দমন শাখার আর এক তদন্তকারী আবার জানান, গত কয়েক বছরে অনলাইনে বিদেশ থেকে মাদক আমদানি করার রমরমা বেড়েছে। কুরিয়র মারফত এমন মাদক সরাসরি বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও অপেক্ষাকৃত কম টাকায় হাতে এসে যাওয়া এমন ওষুধকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। ওই আধিকারিকই বললেন, ‘‘শহর জুড়ে নানা জায়গায় নেশামুক্তি কেন্দ্রের রমরমা চলছে। দিনকয়েক আগেই এক নেশামুক্তি কেন্দ্রে হানা দিয়েছিলাম আমরা। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর নেশা ছাড়ানোর ওষুধ উদ্ধার হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নেশা ছাড়ানোর নামে ব্যবসা ফেঁদে বসে ওই কেন্দ্রের কয়েক জন কর্মীই নেশা ছাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করে নেশা করতেন।’’

চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘আমাদের দেশ থেকে বহু সময়েই ওষুধ পাচার হচ্ছে বলে খবর হয়। যত দিন ওষুধ কেনা এবং বিক্রি নিয়ে কড়া নিয়মবিধি কার্যকর করা না যাবে, তত দিন এ সব রোখা মুশকিল। কড়া নজরদারিও চালানো প্রয়োজন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ জিনিস রোখার জন্য মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ না কেনার সচেতনতা তৈরি করা।’’ ‘বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘যিনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই তাঁর সদস্য-পদ আমরা বাতিল করেছি। সেই সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউটর থেকে রিটেলার পর্যন্ত সকলেরই সচেতনতা তৈরির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। ‘হ্যাবিট ফর্মিং’ যে ১২টি ওষুধ রয়েছে, সেগুলির বিক্রি নিয়ে আরও বেশি করে সতর্ক হতে বলা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement