ধূসরিত: মেটিয়াবুরুজের রাস্তা ঢেকেছে ধুলোয়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
এ শহরে দূষণের প্রধান উৎস হল পথের ধুলো। অথচ সেই ধুলো-দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রতি ৮৮ কিলোমিটার রাস্তা ধুতে বরাদ্দ একটি মাত্র জলের গাড়ি! কলকাতা পুরসভার তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই উঠে আসছে।
গত বছর ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (নিরি) প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) নিরিখে এ শহরের দূষণের প্রধান উৎস হচ্ছে পথের ধুলো। শহরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দূষণের উৎস সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নিরি-কে নিয়োগ করে পর্ষদ। নিরি-র ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতার দূষণের ক্ষেত্রে পথের ধুলোর অবদান ৩৭.৫ শতাংশ। যা কয়লাজাত দ্রব্য বা জ্বালানি (দূষণের পরিমাণ ২৯.৮ শতাংশ), গাছের গুঁড়ি-ডাল-পাতা পোড়ানো (১১.৭ শতাংশ) বা অন্য উৎস থেকে দূষণের (২১ শতাংশ) পরিমাণের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের রিপোর্টেও সার্বিক বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে পথের ধুলো ও নির্মাণস্থলের (নির্মাণ ও ভাঙা) দূষণকেই মুখ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত বছর
কেন্দ্রীয় সরকার গৃহীত ‘দ্য ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’-এ (এনসিএপি) পথের ধুলো নিয়ন্ত্রণ করতে রাস্তায় নিয়মিত জল দিতে সুপারিশ করা হয়েছিল কলকাতা-সহ বেশ কিছু শহরকে, যেখানে দূষণের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ এবং এনসিএপি-র সুপারিশের পরে রাস্তায় জল দিতে কলকাতা পুরসভার তরফে তোড়জোড় শুরু হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রথম দিকে রাস্তায় নিয়মিত জল দেওয়ার জন্য জঞ্জাল অপসারণ দফতরের ১৫টি গাড়ি (ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার) ছিল। কিন্তু জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয় যে, ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিল করতে হবে। এর ফলে রাস্তায় জল দেওয়ার জন্য জঞ্জাল অপসারণ দফতরের ৬টি গাড়িই বাতিল করতে হয়। বর্তমানে ওই দফতরের ৯টি এবং উদ্যান বিভাগের ১২টি গাড়ি (মোট ২১টি) শহরের পথে ধুলো নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। কিন্তু শহরের প্রধান রাস্তার দৈর্ঘ্য ও গাড়ির মোট সংখ্যা ধরলে দেখা যাবে, প্রতিটি জলের গাড়িকে প্রায় ৮৮ কিলোমিটার রাস্তায় জল দিতে হবে! যা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছে পুর প্রশাসনের একাংশ।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অবশ্য বক্তব্য, শুধুমাত্র প্রধান রাস্তাই নয়, শহরের অলিগলি থেকেও ধুলো ওড়ে। রাজ্য সরকার জাতীয় পরিবেশ আদালতে পথের ধুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই গাড়ি ব্যবহার করার কথা বললেও মাত্র ২১টি গাড়ি শহরের পাঁচ শতাংশ রাস্তাতেও জল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘শহরের মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ধরলে তো একটি জলের গাড়িকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার রাস্তায় জল দিতে হবে! সেটা কি কখনও সম্ভব?’’ যদিও পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘পথের ধুলো নিয়ন্ত্রণের সব চেষ্টাই করা হচ্ছে। আরও ২০টি নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হলে সেগুলিকেও ধুলো নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করা হবে।’’
নতুন গাড়িগুলি কাজ শুরু করলে রাস্তা ধুতে পুরসভার মোট গাড়ির সংখ্যা দাঁড়াবে ৪১টি। তবে অঙ্ক বলছে, সে ক্ষেত্রেও শহরের মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ধরলে এক একটি গাড়িকে জল দিতে হবে প্রায় ১১৩ কিলোমিটার পথে!