Online Classes

অনলাইন ক্লাস বন্ধ পুর স্কুলে, স্কুলছুট বাড়ার আশঙ্কা

পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে যে ভাবে শিক্ষকদের মূল কাজ থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে, তাতে আশঙ্কিত মনোবিদ নীলাঞ্জলা সান্যাল।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলকাতার যে সব স্কুল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অধীনে, করোনা-কালে সেগুলিতে অনলাইনে পঠনপাঠন চলছে। বাচ্চাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হোম ওয়ার্কও দেওয়া হচ্ছে। অথচ, কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে অনলাইনে ক্লাস চলা তো দূর, সেখানকার শিক্ষকদের শিক্ষা দফতর থেকে সরিয়ে লাগানো হচ্ছে অন্য দফতরের কাজে। ওই শিক্ষকদের আশঙ্কা, প্রায় এক বছর তাঁরা খুদে পড়ুয়াদের থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকায় স্কুলছুটের হার ভীষণ ভাবে বাড়তে পারে।

Advertisement

শহরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত স্কুল রয়েছে ১৩৫৯টি। পর্ষদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘আমাদের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস চলছে। পড়ুয়াদের জন্য হোম ওয়ার্কও দেওয়া হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬৫। পড়ুয়া সংখ্যা ১৭ হাজারের কাছাকাছি। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৬৫০ জন। পুরসভা সূত্রের খবর, গত জুলাই মাসে ওই শিক্ষকদের শিক্ষা দফতর থেকে সরিয়ে অস্থায়ী ভাবে সোশ্যাল সেক্টরে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সেখানে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের ডিজিটাল রেশন কার্ড সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত করা হয়। এই মুহূর্তে ওই শিক্ষকেরা ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে কাজ করছেন।

করোনা ও লকডাউনের কারণে রাজ্যের স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন বন্ধ থাকলেও অনলাইন ক্লাস চালু রয়েছে। অথচ, পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা না ভেবে পুরসভা পরিচালিত স্কুলগুলির শিক্ষকদের যে ভাবে ভিন্ন দফতরের কাজে লাগানো হচ্ছে, তা নিয়ে তাঁদের একাংশ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং একই সঙ্গে হতাশ। দক্ষিণ কলকাতার একটি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের খেদ, ‘‘পড়ুয়াদের শিক্ষাদান করাই আমাদের কাজ। অথচ নিজস্ব পেশা থেকে সরিয়ে যে ভাবে আমাদের দিয়ে অন্য কাজ করানো হচ্ছে, তাতে আমরা ভীষণ হতাশ। পুর কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের বলতেন ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করতে, তা হলে ভাল হত।’’ উত্তর কলকাতার একটি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের আবার প্রশ্ন, ‘‘প্রায় এক বছর হতে চলল স্কুল বন্ধ। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এতটুকু যোগাযোগ নেই। স্কুল আবার খুললে ওই পড়ুয়ারা আদৌ আসবে তো?’’

Advertisement

পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে যে ভাবে শিক্ষকদের মূল কাজ থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে, তাতে আশঙ্কিত মনোবিদ নীলাঞ্জলা সান্যাল। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা টানা স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় একটা বড় দূরত্ব তো তৈরি হয়েছেই। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক-পড়ুয়াদের মধ্যে শীঘ্র বন্ধন তৈরি করতে হবে। না হলে ওই সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতেই ভুলে যাবে।’’

এই প্রসঙ্গে শিক্ষা বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা সরকারি নির্দেশ মেনে চলছি। স্কুল বন্ধ বলেই শিক্ষকদের অন্য দফতরের কাজে লাগানো হচ্ছে।’’ কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যেখানে অনলাইনে পঠনপাঠন চালু রেখেছে, সেখানে পুরসভা পরিচালিত স্কুলগুলিতে অনলাইন ক্লাস চালু করা যাচ্ছে না কেন? কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি অভিজিৎবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement