—প্রতীকী চিত্র।
রাস্তার এক দিকে পড়ে রয়েছে একটি স্কুটার। আশপাশে রক্তের দাগ আর ভাঙা কাচের টুকরো ছড়িয়ে। স্কুটারের এক পাশে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এক যুবক। কিছুটা দূরেই পড়ে এক তরুণী। কয়েক হাত দূরে পড়ে রয়েছে বছর তিনেকের এক শিশু। সে সমানে চিৎকার করে কেঁদে চলেছে। তার পাশেই পড়ে থাকা এক মহিলা সংজ্ঞাহীন। মাথা থেকে রক্ত ঝরছে!
মঙ্গলবার রাতে পার্ক সার্কাস চার নম্বর সেতুর উপরে এমন দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই। শেষে কোনওমতে চার জনকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান তাঁরা। সেখানে চিকিৎসকেরা মধ্যরাতের পরে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম নাসিমা খানম (৪৫)। আহতদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর পুত্র সরফরোজ খান, পুত্রবধূ নেহা এবং তিন বছরের নাতি রেহান। সরফরোজকে পরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তিনি সেখানকারই পুরুষদের ওয়ার্ডে ভর্তি। তবে সরফরোজের পুত্র এবং স্ত্রীকে চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আঘাত তেমন গুরুতর নয়।
জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ। সরফরোজের স্কুটারেই যাচ্ছিলেন সকলে। কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। স্কুটারের চালক সরফরোজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল রেহান। পিছনের আসনে প্রথমে বসেছিলেন নেহা, তারও পিছনে ছিলেন সরফরোজের মা নাসিমা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, চার নম্বর সেতুতে উঠে এক পাশ দিয়ে স্কুটারটি যাচ্ছিল। সেই সময়ে একটি লরি পিছন থেকে এসে তাতে ধাক্কা মারে। লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল কড়েয়া থানার অন্তর্গত। ইতিমধ্যে তদন্তভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের ফেটাল স্কোয়াড। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে তারা। যদিও রাত পর্যন্ত লরিটিকে চিহ্নিত করতে পারা যায়নি।
সরফরোজদের বাড়ি তপসিয়া রোডে। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, তাঁদের পরিবারের কেউই কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এক আত্মীয় শুধু বলেন, ‘‘একটা নিমন্ত্রণবাড়ি থেকে ফিরছিলেন সকলে। বাচ্চাটার কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না।’’ মৃতের ভাই বললেন, ‘‘বার বার বলা সত্ত্বেও কাল হেলমেট নিল না। কথা শুনলে প্রাণটা হয়তো এ ভাবে যেত না।’’ প্রসঙ্গত, পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গলবার বেলা পর্যন্ত গত এক মাসে কলকাতায় পথ দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার উপরে নির্ভর করে গরমে রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকার কারণেই কি এমন দুর্ঘটনা পর পর ঘটছে? যদিও পুলিশকর্মীরা বলছেন, ‘‘রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। এই ঘটনা সচেতনতার অভাবের দিকেই আঙুল তুলছে। একে হেলমেট নেই, তার উপর এক স্কুটারে সওয়ার হয়েছেন এত জন।’’