গোলমালের খবর পেয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
কিডনির অসুখে আক্রান্ত দাদার অবস্থা গুরুতর বুঝে রাতে ওয়ার্ডের ভিতরে ভাইকে থাকতে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। সোমবার ভোরে দাদার মারা যাওয়ার খবর পেতেই ওয়ার্ডের ভিতরে ভাই তাণ্ডব শুরু করে দেন বলে অভিযোগ। চিকিৎসকদের মারধর থেকে শুরু করে ভাঙচুর, কিছুই বাদ দিলেন না তিনি।
সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে এসএসকেএম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে। কর্মরত এক চিকিৎসককে ঘুসি মারার অভিযোগে মৃতের ভাই মহম্মদ সাজিদকে গ্রেফতার করেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ। এ দিনই অভিযুক্তকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, সাজিদের ঘুসিতে চিকিৎসক সৌগত দাশগুপ্ত কানে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই সাজিদকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারক তাঁকে এক দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, মোমিনপুরের বাসিন্দা, সাজিদের দাদা মহম্মদ সাকির (৩০) এ দিন ভোরে মারা যান। ১৫ জুলাই থেকে সাকির কিডনির সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। বুকে সংক্রমণ ধরা পড়ার পরেই তাঁর অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে। এর পরেই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সাজিদকে রবিবার রাতে সাকিরের পাশে থাকার অনুমতি দেন। সেই মতো রাতে তিনি ওই ওয়ার্ডেই ছিলেন।
এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই সাকিরের পরিবারকে একাধিক বার জানানো হয়েছিল যে, তাঁর কিডনির অবস্থা ভাল নয়। এমনকি, পরিস্থিতি যে আরও খারাপের দিকে যেতে পারে, তা-ও জানানো হয়। চিকিৎসাধীন থাকার সময়েও প্রায় প্রতিদিনই সাকিরের বাড়ির লোকজনকে তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট দেওয়া হত। এ দিন ভোরে শারীরিক অবস্থা আচমকা খারাপ হয়ে পড়ার পরেও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়।
পুলিশকে ওই ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, এ দিন ভোরে সাকির আচমকাই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সাজিদের অভিযোগ, তাঁর দাদা যখন মারা যাচ্ছেন, তখন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউ ওয়ার্ডে হাজির ছিলেন না। এই রাগেই উন্মত্ত হয়ে ওঠেন সাজিদ। অভিযোগ, রেগে গিয়ে ঘুসি মেরে ওয়ার্ডের ভিতরে কাচের পার্টিশন ভেঙে ফেলেন। কাচে তাঁর হাতের শিরা কেটে যায়। রক্তে ভেসে যায় ওয়ার্ড।
স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে বাগে আনতে পারছিলেন না। এক চিকিৎককেও রেগে গিয়ে সাজিদ ধাক্কা ও ঘুসি মারেন বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে নার্স-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ করতে থাকেন। হাসপাতালের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভবানীপুর থানার ওসি সুমিত দাশগুপ্ত বাহিনী নিয়ে ওয়ার্ডের ভিতরে ঢোকেন। ওই পুলিশকর্মীরা সাজিদকে চেপে ধরে রাখেন। সেই সুযোগে চিকিৎসকেরা তাঁর কেটে যাওয়া হাতের প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। এর পরেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। তাই বারবার একই ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকদের উপরে এই আক্রমণ অত্যন্ত দুঃখজনক।’’