মাথায় গুরুতর আঘাত পান পরিবহ মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
মাথায় এমন ভাবে চোট পেয়েছেন যে, করোটি ভেঙে ব্রেনের দিকে ঢুকে গিয়েছে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের সিটি স্ক্যানে ধরা পড়েছে কপালের উপরের দিকে অর্থাৎ মাথার সামনের ডান দিকের করোটি ভেঙে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার ছবি। যা দেখে চিতিৎসকেরা শিউরে উঠেছেন! কতটা জোরে আঘাত করলে এমন পরিস্থিতি হয়, তা ভেবে চমকে উঠছেন পরিবহের সহকর্মীরাও।
সোমবার রাতে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর যখন চড়াও হয়েছিলেন মৃত রোগীর পরিবারের লোকজন তখনই গুরুতর জখম হন পরিবহ। তাঁকে ওই রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস-এ। সেখানেই মঙ্গলবার দুপুরে অস্ত্রোপচার হয় পরিবহর। এ দিন বিকেলে ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস-এর তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ভোর ৩টে ২২ মিনিট নাগাদ বছর চব্বিশের পরিবহকে ভর্তি করা হয়েছে। সেইসময় পরিবহের জ্ঞান ছিল। চিতিৎসতদের তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। তাতেই জখম হয়েছেন তিনি। এর পরেই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। একবার খিঁচুনিও হয়।
পরিবহের মাথার সিটি স্ক্যানের একটি ছবিও সামনে এনেছেন নিউরোসায়েন্সেস-এর চিতিৎসকেরা। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রচণ্ড জোরে আঘাত লাগায় কপালের উপরে করোটির সামনের একটা অংশ তুবড়ে ভিতরে ঢুকে গিয়েছে। চিকিৎসা পরিভাষায় এই চোটকে ‘কমপাউন্ড ডিপ্রেস্ড ফ্র্যাকচার অব স্কাল’ বলা হয়। আইটিইউ-তে থাকাকালীন আইভি ফ্লুইড, অ্যান্টিবায়োটিক এবং খিঁচুনি বন্ধের ওষুধ দেওয়া হয়েছেপরিবহকে। গোটা পেটের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হয়।
এ ভাবেই তুবড়ে গিয়েছে করোটি। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: আগামিকাল রাজ্যের সমস্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আউটডোর বন্ধের ডাক
তবে ইউএসজিতে রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়েনি বলে জানিয়েছেন নিউরোসায়েন্সেস-এর এক চিকিৎসক। সিটিস্ক্যানেও গুরুতর কিছু ধরা পড়েনি বলে জানানো হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। আপাতত পরিবহের অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে এখনও পুরোপুরি বিপদমুক্ত নন তিনি।
এই বিবৃতি দিয়েছে ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস।—নিজস্ব চিত্র।
এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে ধুন্ধুমার বাধে এনআরএস চত্বরে। ডাক্তারদের উপর চড়াও হন রোগীর পরিবারের লোকজন। বচসা থেকে ক্রমশ হাতাহাতি শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। তার কিছু ক্ষণ পরেই একটি ম্যাটাডোরে চেপে একদল দুষ্কৃতী সেখানে এসে পৌঁছয় বলে দাবি হাসপাতালের চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের।তিনি বলেন, ‘‘হেলমেটে মুখ ঢেকে, হাতে লাঠিসোটা নিয়ে হাসপাতালে ঢুকে আক্রমণ করে ওই দুষ্কৃতীর দল। সেইসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন পরিবহও। তাঁর মাথা লক্ষ্যকরে ইট ছুড়ে মারে দুষ্কৃতীরা। সেই আঘাতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন পরিবহ। এনআরএস-এই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে, রাতেই মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস-এ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।’’ পরিবহের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। তবে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত নন তিনি।
আরও পড়ুন: এনআরএস কাণ্ডের জের, রাজ্য জুড়ে সব মেডিক্যাল কলেজেই প্রতীকী কর্মবিরতি, বন্ধ আউটডোর পরিষেবা
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।