দুই কিশোরকে খুনে ব্যবহৃত সেই গাড়ি। বুধবার, বাগুইআটি থানা চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
শুধু চালাতে জানলেই হল। নথিভুক্তির কিছু নিয়ম মানলেই গাড়ি আপনার হাতে। এর পরে সেই গাড়ি কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, কে ব্যবহার করছেন, সে সবের কোনও হদিস থাকে না। বাগুইআটির দুই কিশোরকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় অপরাধীরা এমনই ‘সেলফ সার্ভিস’ ভাড়ার গাড়ি ব্যবহার করেছিল বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে। এর আগেও শহরে নানা অপরাধের ক্ষেত্রে এমন গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। এ সব গাড়ি ধরার একাধিক উপায় থাকলেও নজরদারি যে পর্যাপ্ত নয়, বাগুইআটির ঘটনাতেই তা স্পষ্ট। এই ধরনের গাড়ি ভাড়া দেওয়া কতটা নিরাপদ, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
অভিষেক নস্কর ও অতনু দে নামে ওই দুই কিশোরকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত ভাড়ার গাড়িটি হাতে এসেছে পুলিশের। জানা গিয়েছে, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই একটি সেলফ সার্ভিস সংস্থার কাছ থেকে ওই গাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল অভিযুক্তেরা। মিনাখাঁ থেকে সেটি আনা হয়েছিল। অতনু ও অভিষেককে বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে নিয়ে গিয়ে গাড়ির ভিতরেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে দু’জনের দেহ দু’টি আলাদা জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।
শহরে সেলফ সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে অপকর্মের ঘটনা অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এই ধরনের গাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে কিছু কাগজপত্র নেওয়া হলেও সেগুলি কতটা যাচাই করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গিয়েছে, সেলফ সার্ভিসের গাড়ি ভাড়া নিতে গেলে গ্রাহককে ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রতিলিপি-সহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে হয়। কিন্তু জমা দেওয়া সেই লাইসেন্স আসল কি না বা তাতে থাকা ঠিকানার অস্তিত্ব আছে কি না, তা যাচাই করা হয় না বলেই অভিযোগ। এই ধরনের বহু ক্ষেত্রে আধার কার্ড নেওয়া হয়। কিন্তু সেটাও যাচাই করা হয় না। ভাড়ার টাকা অগ্রিম দিয়ে দিলেই কাজ সহজ হয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। বাগুইআটি-কাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়িটির ক্ষেত্রে অবশ্য কী কী নথি দেওয়া হয়েছিল বা আদৌ দেওয়া হয়েছিল কি না, পুলিশ তা জানায়নি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, আটক করা ওই সেডান গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন কর্নাটকের। বছর তিনেক আগে সেই রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ওই গাড়ির যাবতীয় কর দেওয়া রয়েছে।
এর আগে চলতি বছরেই কলকাতা থেকে একটি সেলফ সার্ভিস গাড়ি ভাড়া নিয়ে খড়দহে সেটি বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি প্রথমে টেরই পাননি গাড়ির মালিক। ফেব্রুয়ারিতে বাঁশদ্রোণী থানাতেও এমন একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও সেলফ সার্ভিস গাড়ি ভাড়া নিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। বাগুইআটির ঘটনার তদন্তে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘এই ধরনের গাড়ি ভাড়া দেওয়ার পরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা জানতে বিশেষট্র্যাকিং ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু তদন্তে নেমে দেখা যায়, গাড়ি হাতানোর পরেই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সংস্থার কাছ থেকেও এ বিষয়ে সদুত্তর মেলে না।’’
বহু ক্ষেত্রে অবশ্য গ্রাহক গোপনীয়তার স্বার্থে ওই ট্র্যাকিং বন্ধ করে দেন বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। অপরাধীরাও গাড়ি চুরি বা গাড়িতে কোনও অপরাধ করতে গেলে ঠিক সেটাই করে। বাগুইআটির ঘটনাতেও তেমন কিছু হয়েছিল কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ওই ঘটনা সেলফ সার্ভিস গাড়ি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।