R G Medical College And Hospital

‘জন্ম দিয়েই বিপদে পড়েছি, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না’! বলছেন আরজি করে ধর্ষণ ও হত্যায় ধৃতের মা

আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের মায়ের কথায়, “ছেলে এই ঘটনা ঘটাতে পারে না।” তবে ছেলের একাধিক বিবাহের কথা তাঁর কানে এসেছিল বলে জানিয়েছেন বৃদ্ধা।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ১৫:২৫
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ছেলে এমন কাজ করেছে, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না আরজি করের ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের মা। অভিযুক্তের মায়ের কথায়, “ছেলে এই ঘটনা ঘটাতে পারে না।” তবে ছেলের একাধিক বিবাহের কথা তাঁর কানে এসেছিল বলে জানিয়েছেন বৃদ্ধা। একই সঙ্গে তাঁকে বিলাপের সুরে বলতে শোনা গেল, “ছেলেকে জন্ম দিয়েই বিপদে পড়েছি।” ছেলে শেষ কবে বাড়িতে এসেছিলেন, তা-ও সঠিক ভাবে জানেন না বলে দাবি অভিযুক্তের মায়ের।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার একটি গলিতে ওই যুবকের বাড়ি। গলির মধ্যে কিছু যুবকের জটলা। সেটা ফেলে খানিক এগোতেই দেখা গেল, ওই গলির মধ্যে রাখা রয়েছে কারও পোষা পাখির খাঁচা। কোনও বাড়ির সামনে জুতো খোলা। কয়েকটা বাড়ি পর ডান দিকে একটি দরজা দিয়ে ঢুকলে এক পরিবারের বাস। সেই পরিবারের সঙ্গেও খুব সদ্ভাব নেই যুবকের পরিবারের। পাশের ঘরের ওই পরিবারের এক সদস্যাকে জিজ্ঞাসা করা হল অভিযুক্ত যুবক সম্পর্কে। সেই মহিলা বললেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ নেই।’’ ওই ঘর পেরিয়ে আরও একটি দরজা। সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। পাশ থেকে এক জন বললেন, ‘‘উনি ওর মা।’’

সাংবাদিকদের দেখেই অভিযুক্তের মা বলে উঠলেন, ‘‘কী হয়ে গেল!’’ দেখে মনে হল মানসিক ভাবে খানিক বিধ্বস্ত। বললেন ভেতরে গিয়ে কথা বলতে। দরজায় হলুদ রঙের পর্দা। বাইরে জুতো, বাসনমাজার জিনিসপত্র। ঘরে ঢোকার মুখে এক পাশে রাখা একটি ফ্রিজ, গ্যাস এবং অভেন। কথা বলতে বলতেই চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। চুনফেরানো নীল রঙের নোনা ধরা দেওয়াল। বিছানায় কম্বল, বালিশ রাখা। একটু চিটচিটে, কিন্তু পরিপাটি করে খাট গোছানো। দেওয়ালের এক দিকে অভিযুক্ত যুবকের বাবার ছবি। তার নীচে দেওয়ালে অভিযুক্ত যুবকের মৃত স্ত্রীর ছবি। এক পাশে পুজোর সরঞ্জামও দেওয়ালের সঙ্গে ঝুলছে। ক্যালেন্ডারে কালী ঠাকুরের ছবি। পাশে প্লাস্টিকের ছোট আয়না ঝোলানো। দেওয়ালের সঙ্গে র‌্যাকে কিছু কাচের কাপ-প্লেট, ওষুধপত্র। পাশে একটি আলমারি। ‌ঘরের এক দিকে রাখা দু’টি প্লাস্টিকের চেয়ার। বিছানার এক পাশে একটির উপর আর একটি টুল রাখা। তা টেনেই বসতে বললেন।

Advertisement

ছেলের কথা বলতে বলতেই উঠল তাঁর স্বামীর কথা। আলমারি খুলে লালপাড়-সাদা শাড়ি বার করে ফেললেন। দেখালেন, তার ভিতর রাখা তাঁর স্বামীর ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং একটি মেয়ের স্কুলের আই কার্ড। শেষ কবে ছেলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল? মা উত্তর দিলেন, ‘‘ওর পিসি জানে। আমি তখন তো ছিলাম না। মেয়ের বাড়িতে ছিলাম।’’ কথা বলতে বলতে স্বর কখনও উঠছে, নামছে। খানিক অবিন্যস্ত শোনাচ্ছে। বার বার বলে চলেছেন, ‘‘ছেলে এটা কী ভাবে করতে পারে? ও তো বিয়ে করেছিল। ওর স্ত্রী তো ক্যানসার মারা যায়। রোগ লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছিল।’’ প্রশ্ন করা হয়, অভিযুক্তের পাঁচ বিয়ে বলে শোনা যাচ্ছে। এ কথা শুনে খানিক বিহ্বল শোনায় বৃদ্ধার গলা। বললেন, ‘‘আমি একটা স্ত্রী বলেই জানি। এখন শুনছি অনেক বিয়ে। পাড়ার লোকজন বলছে। যারা বলছে, তারাই জানে। এ বাড়িতেই তো ওর বৌ থাকত।’’ কখনও শুনেছেন কোনও মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ওঁর ছেলে? প্রশ্ন শুনেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বৃদ্ধা। হাত তুলে থাপ্পড় মারার ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘এটা শুনলে তো দিতাম দুই ঘা। ওকে বিয়ে করে ঘরে বৌ আনতে দিতাম ঘরে?’’ জানালেন, ছেলে মাঝেমধ্যে আসতেন। খাবার-দাবার নিয়ে যেতেন। কখনও ফোর্থ ব্যাটেলিয়ানে থাকতেন, কখনও দক্ষিণ কলকাতার ওই বৃদ্ধার বাড়িতে। যদিও শেষ কবে ছেলে এসেছেন, মনে করতে পারেন না তিনি। এই ঘটনার কথা তিনি জানতেন না বললেই উল্লেখ করলেন। বললেন, ‘‘ওর পিসি আমাকে প্রথম বলল। তার পর টিভিতে দেখলাম ছেলের ছবি দেখাচ্ছে।’’

কথায় কথায় জানালেন, এক বোনকে নাচ শিখিয়েছেন এবং এক বোনকে এনসিসির ট্রেনিং নিতে ভর্তি করেছিলেন। ছেলের কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘‘ও কিছু দিন বক্সিংও শিখেছে।’’ অভিযুক্তের দুই বোন পুলিশে কর্মরত বলে স্থানীয়েরা জানান। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, এক অভিযুক্তের এক বোন ছোটবেলায় মারা গিয়েছে।

আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবক পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। যদিও এই বিষয়ে পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিযুক্তের পরিচয় নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে তার পরিচয় এক জন সর্বোচ্চ পর্যায়ের অপরাধী।’’ তার পরেও সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করেছিল, ধৃতের পরিচয় তা হলে কী? তাঁর পেশা কী? পুলিশ কমিশনার প্রতি বারই সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। শেষ দিকে তাঁকে দৃশ্যতই ‘বিরক্ত’ এবং খানিকটা ‘উত্তেজিত’ও শুনিয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় হল, তিনি কোনও বারই ‘না’ বলেননি। যা নিয়ে পুলিশেরই একাংশে প্রশ্ন উঠেছে।

তবে ধৃত ব্যক্তিকে ‘অপরাধমনস্ক’ বলে বর্ণনা করেন পুলিশ কমিশনার। তবে ধৃত যুবকের অতীত অপরাধের কোনও ‘রেকর্ড’ রয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। অভিযুক্তের মায়ের বক্তব্য, এলাকায় তাঁর ছেলের নামে কোনও বদনাম শোনেননি তিনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, অভিযুক্ত বদমেজাজি ছিলেন। সেই অভিযোগও খারিজ করে দেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের মা।

সূত্রের খবর, ধৃত ব্যক্তি সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ার কারণেই তাঁর সরকারি হাসপাতালে গভীর রাতে ঢুকতে বা বেরোতে কোনও অসুবিধা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement