Syndicate

syndicate: মূল অভিযুক্ত অধরাই, ধৃতদের পুলিশি হেফাজত

দুষ্কৃতী তাণ্ডব থানা থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে ঘটলেও পুলিশ ছিল নীরব দর্শক, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৫১
Share:

বেহালার চড়কতলায় গোলমালের পরে। নিজস্ব চিত্র

সিন্ডিকেটের দখল কে নেবে? সেই লড়াইয়ের জেরেই কার্যত বিনা বাধায় মঙ্গলবার বেহালার চড়কতলায় একশো মিটার এলাকা জুড়ে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব। রাতের শহরে সেই দুষ্কৃতী তাণ্ডব থানা থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে ঘটলেও পুলিশ ছিল নীরব দর্শক, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। ঘটনার দু’দিন পরেও কেন মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা গেল না, স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে সেই প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় বিধায়ককে ফোন করে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিও চলেছিল। মারধরের পাশাপাশি কয়েক জনকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, মারধরের হাত থেকে রেহাই পাননি মহিলারাও। দু’জন গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গোলমালের সময়ে ব্যবহৃত কিছু জিনিস ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে এ দিন সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল আদালতে জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশের সামনে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব চললেও লাঠি চালানো বা গ্রেফতারির বদলে শুধু হাত তুলে থামতে বলেই ক্ষান্ত হয়েছে বাহিনী। পুলিশের সেই ভূমিকা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তোলেন স্থানীয়েরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ঘটনার সময়ে পুলিশ সক্রিয় হলে গোলমাল এত দূর গড়াতই না। এমন পরিস্থিতি পুলিশকে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখাটাই প্রত্যাশিত ছিল।’’ পুলিশের এই ভূমিকাই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Advertisement

যদিও বাহিনীর গাফিলতির অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশের উপরমহল। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা প্রথমে সংখ্যায় বেশি ছিল। তাই পরে আরও বাহিনী পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ঘটনার পরদিনই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ কিন্তু কেন সেই রাতেই গ্রেফতার করা হল না? পুলিশকর্তা ওই প্রশ্নের উত্তরে চুপ থেকেছেন। এই প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।

পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় দুই গোষ্ঠী দু’টি পৃথক মামলা রুজু করেছে। প্রথম মামলাটি দায়ের করেন গণেশ ঘোষ। দ্বিতীয় মামলটি দায়ের করেছেন সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’টি অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গোলমাল ও সংঘর্ষ বাধানো, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

চড়কের মেলাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলের সূত্রপাত হলেও এর পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেটের দখলদারি, দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার দখল নেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাপান ও তাঁর দলবল মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ হামলা চালায় বলে অভিযোগ। দাঁড় করানো একের পর এক গাড়িতে লাঠি, বাঁশ, রড নিয়ে দেদার ভাঙচুর চালানো হয়। এতে দশটির মতো গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর। অভিযোগ, আবাসনের ভিতরে ঢুকেও কাচের বোতল ছোড়া ও ইট ছোড়া হয়।

সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, প্রথম মামলায় ন’জন এবং দ্বিতীয় মামলায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতে তোলা হয়। পলাতক অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার জন্য বিচারকের কাছে ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক তা মঞ্জুর করে ধৃতদের আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

এ দিকে, এই ঘটনায় ধৃতদের পরিবারের সদস্যেরা এ দিন সকালে স্থানীয় বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। রত্নার সঙ্গে দেখা করেন মূল অভিযুক্ত বাপানের পরিবারের সদস্যেরাও। তাঁদের বিধায়ক জানান, বাপান যেন শীঘ্রই আত্মসমর্পণ করেন। বেহালার এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নিজে দোষীদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এ দিন রত্না বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দোষীরা শাস্তি পাবেনই। এফআইআরে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলেছি।’’ সূত্রের খবর, এ দিনই বাপানকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement