মর্মান্তিক: পুরসভার গাড়ির ধাক্কায় কলেজ স্কোয়ারে মৃত্যু হয় সুবীর মোদকের(ইনসেটে)। (ডান দিকে) পড়ে রয়েছে তাঁর চটি। শুক্রবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
বাজার করে ফেরার পথে পুজোর কাজের তদারকি করতে পার্কে ঢুকেছিলেন। সেই পার্কের ভিতরেই গাড়ির চাকায় পিষে মৃত্যু হল কলেজ স্কোয়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম কর্তা সুবীর মোদকের (৬৫)। কলেজ স্কোয়ারের রেলিং ঘেরা জায়গায় কী ভাবে গাড়ি ঢুকল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুবীরবাবুর পরিবার। ঘটনার পরে দোষীর শাস্তি চেয়ে পথ অবরোধ করেন পুজো কমিটির অন্য সদস্যেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে খবর আসে যে কলেজ স্কোয়ারের ভিতরে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। সূর্য সেন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন সুবীরবাবুর পরিবারের সদস্যেরাও।
পরে মৃতের ছেলে সুব্রত মোদক জানান, এ দিন সকালে তাঁর বাবা কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে বাজার করতে গিয়েছিলেন। সওয়া ন’টা নাগাদ কলেজ স্কোয়ারের এক মালি তাঁদের বাড়িতে ফোন করে জানান, একটি দুর্ঘটনায় সুবীরবাবু আহত হয়েছেন। তাঁদের কলেজ স্কোয়ারের বিদ্যাসাগর মূর্তির কাছে যেতে বলেন ওই মালি। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুব্রতবাবু দেখেন, পুরসভার পার্ক ও উদ্যান বিভাগের একটি গাড়ির সামনের দুই চাকার মাঝখানে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন সুবীরবাবু। তাঁর মুখ থেঁতলে গিয়েছে। আশপাশে সেই মালি বা অন্য কেউ নেই। সুব্রতবাবুই সঙ্গে সঙ্গে ট্র্যাফিক গার্ডে ফোন করে খবর দেন। খবর পেয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুবীরবাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। ঘটনার পরে কলেজ স্কোয়ারের সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির লোকজন ও স্থানীয়েরা রাস্তা অবরোধ করেন। তাঁরা দাবি করেন, ওই গাড়ির চালককে গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে অবরোধ ওঠে।
সুব্রত জানিয়েছেন, তাঁর বাবা এই সময়ে পুজোর কাজের তদারকি করতে মাঝে মাঝেই কলেজ স্কোয়ারে যেতেন। মাঠ পরিষ্কার থেকে শুরু করে গাছের ডাল কাটার কাজের তদারকি সবটাই তিনি করতেন। তাঁর অনুমান, সুবীরবাবু এ দিনও বাজার থেকে ফেরার সময়ে ওই কাজ দেখতেই স্কোয়ারে ঢুকেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, স্কোয়ারের ভিতরে গাড়ি ঢোকার কথা নয়, কিন্তু সেখানে পুরসভার গাড়িটি এল কী ভাবে? এক জন গাড়ির সামনে রয়েছেন, সেটাই বা কেন গাড়ির চালক দেখতে পেলেন না? তাঁর অভিযোগ, অপটু হাতে গাড়ি পড়লেই এই দুর্ঘটনা ঘটা সম্ভব।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম ঘটনাটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে জানান। তিনি বলেন, “পুলিশ যেমন তদন্ত করছে করুক। পুরসভাও আলাদা ভাবে তদন্ত করবে। যদি কোনও রকম গাফিলতি বা উদাসীনতার ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’