প্রবল গরমে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। প্রতীকী ছবি।
গত কয়েক দিন ধরে চলা বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কোনও বিরাম নেই। আর তার জেরে বিক্ষোভ, পথ অবরোধও চলছে লাগাতার। মঙ্গলবার রাতে এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় হরিদেবপুরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রায় এক ঘণ্টা হরিদেবপুরের মহাত্মা গান্ধী রোড অবরোধ করে রাখা হয়। পরে গভীর রাতে হরিদেবপুর থানার পুলিশ গেলে অবরোধ ওঠে। পুলিশ ও সিইএসসি-র কর্মীদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। তীব্র গরমের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের জেরে ভোগান্তির শেষ নেই সাধারণ মানুষের।
এ দিকে, প্রবল গরমে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণের টালিগঞ্জ ও যাদবপুরের মতো এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সব চেয়ে বেশি। টালিগঞ্জের একাধিক এলাকায় পর্যাপ্ত পানীয় জল মিলছে না বলে অভিযোগ। ওই অঞ্চলে কলকাতা পুরসভার ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লি, অরবিন্দনগর, সমাজগড় এলাকায় পানীয় জলের হাহাকার পড়ে গিয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষকে পানীয় জল কিনে খেতে হচ্ছে।
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি তপন দাশগুপ্ত পানীয় জলের সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জানান, শীঘ্রই ওই এলাকায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন চালু হবে। তখন সমস্যা মিটবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গরমে পানীয় জলের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় জলের চাপ কমে গিয়েছে।
অনেকটা একই রকম পরিস্থিতি যাদবপুরের ১০৩, ১০৬ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে। যাদবপুরের বিধায়ক তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার জানান, গরমে ওই তিনটি ওয়ার্ডে জলকষ্ট দেখা দিয়েছে। সমস্যা মেটাতে পুরসভার তরফে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। টালিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে বুধবার ১১ নম্বর বরো অফিসে পুরপ্রতিনিধি ও জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
কেবল দক্ষিণ কলকাতাই নয়, খাস মধ্য কলকাতার বৌবাজারে, পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন অংশেও পানীয় জলের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডের পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে মাস পাঁচেক আগে পুর অধিবেশনে বলেছিলাম। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি এলাকায় পাইপলাইন বসানোর আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত সেই কাজ হয়নি।’’
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলের গাড়ি পাঠানো হচ্ছে। পুরসভার ওই বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এই অসহনীয় গরমে সাধারণ মানুষ একাধিক বার স্নান করছেন। জল বেশি করে ব্যবহার করছেন সকলেই। ফলে, পানীয় জলের চাহিদা এই সময়ে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।’’
সিইএসসি-র তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সিইএসসি এলাকায় ২৫২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছিল। যা সর্বকালীন রেকর্ড। বুধবার সিইএসসি এলাকায় ২৩৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। গত তিন দিন ধরে সিইএসসি রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে।
তা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হচ্ছে কেন? সিইএসসি-র বক্তব্য, লাইনে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলেই এই সমস্যা হচ্ছে। নাগরিকেরা একটু বুঝেশুনে বিদ্যুৎ খরচ না করলে এই সমস্যা মিটবে না।