অনশনমঞ্চে ‘দুর্নীতির হাঁড়ি’ বসানো হয়েছে। রবিবার ধর্মতলায়। — নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলায় অনশনমঞ্চের সামনে রাস্তা জুড়ে বসে আছেন অনেকে। দিচ্ছেন স্লোগান। তার মাঝেই রাস্তায় বসানো হয়েছে দু’টি ‘দুর্নীতির হাঁড়ি’। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা চিরকূটে লিখে হাঁড়িতে ফেলা হচ্ছে।
অনশনমঞ্চের সামনে ভিড়, চলছে স্লোগানিং। রবিবার ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলায় অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন। রবিবার সকালে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, স্নিগ্ধা হাজরার রক্তচাপ ১০২/৭২। তাঁর নাড়ির গতি ৮৮ এবং ক্যাপিলারি ব্লাড গ্লুকোজ (সিবিজি) ৬৮। তনয়া পাঁজার রক্তচাপ ১০৮/৭৬। তাঁর নাড়ির গতি ৯৪ এবং সিবিজি ৭০। সায়ন্তনী ঘোষ হাজরার রক্তচাপ ১০৬/৭৮। তাঁর নাড়ির গতি ৮২ এবং সিবিজি ৬৯। পুলস্ত্য আচার্যের রক্তচাপ ১১২/৮৬। তাঁর নাড়ির গতি ৮৮ এবং সিবিজি ৭০। অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের রক্তচাপ ১২০/৯০। তাঁর নাড়ির গতি ৮৮ এবং সিবিজি ৬৬। উত্তরবঙ্গের সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রক্তচাপ ১০০/৬০। তাঁর নাড়ির গতি ৮০ এবং সিবিজি ৮৭।
এসএসকেএমের ঘটনার কথা শুনে ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারেরা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে এই ধরনের হামলা প্রমাণ করে দিচ্ছে, আমাদের ১০ দফা দাবি কতটা ন্যায্য। শুধু ডাক্তার তো নয়, রোগী, রোগীর আত্মীয়, কেউই সুরক্ষিত নয়। নিরাপত্তা কোথায়? পুলিশ কী করছে?’’
রবিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এক রোগীর আত্মীয়ের মাথা ফেটেছে। এই ঘটনায় আরও এক বার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে।
অনিকেত, অলোকের পর অনুষ্টুপ, একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনশনরত সহযোদ্ধারা। জুনিয়র ডাক্তারেরা তবু লড়ে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছেন। রবিবার ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে আন্দোলনকারী এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘‘অনশন যাঁরা করছেন, অনেকেই শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাঁদের মনের জোর অটুট। আমরা সকলে লড়ে যাব।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের সমর্থনে দিকে দিকে প্রতীকী অনশন চলছে। মুর্শিদাবাদ থেকে মালদহ, বিভিন্ন জেলায় বহু মানুষ প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। চলছে গান-বাজনা, দেওয়া হচ্ছে স্লোগানও।
কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ‘গণইস্তফা’র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। এই মর্মে কর্তৃপক্ষকে ইমেল করেছেন তাঁরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে একাধিক হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকেরা ‘গণইস্তফা’ দিয়েছেন। যদিও সরকার জানিয়েছে, ইস্তফা ব্যক্তিগত ভাবে দিলে তবেই তা গ্রাহ্য হয়। ‘গণইস্তফা’ আদৌ পদত্যাগ হিসাবে গ্রাহ্য নয়।
সোমবার, ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা। সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে এবং জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবিকে সমর্থন জানিয়ে ১০ ঘণ্টার প্রতীকী অনশন শুরু করলেন নিউ গড়িয়ার সমবায় আবাসনের বাসিন্দারা। রবিবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবির সমর্থনে রবিবার এক বেলা অরন্ধনের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে সোমবার থেকে দু’দিনের জন্য কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাকি সব বিভাগ বন্ধ থাকবে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত।
‘‘এক জন অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, এক জন অনিকেত মাহাতো, এক জন অলোক বর্মা অসুস্থ হলে আরও ১০ জন অনুষ্টুপ, অনিকেত এবং অলোক তৈরি আছেন।’’ বললেন কিঞ্জল নন্দ।
অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছেন। সময় যত এগোচ্ছে, তাঁদের দুর্বলতা বাড়ছে। তবে শারীরিক দুর্বলতা বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মনের জোরও, দাবি জুনিয়র ডাক্তারেরা।
সাত জুনিয়র ডাক্তার এই মুহূর্তে ধর্মতলায় অনশনে বসে রয়েছেন। তাঁরা জল ছাড়া কিছুই খাচ্ছেন না। বেশি জল খাওয়ায় বার বার টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে তাঁদের।
মোট তিন জন জুনিয়র ডাক্তার অনশন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অনুষ্টুপের আগে ধর্মতলার মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন আরজি করের অনিকেত মাহাতো। তাঁকে আরজি করের সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়। এ ছাড়া, অসুস্থ হয়ে পড়েন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অনশনরত অলোক বর্মাও।
শনিবার রাতে অনশনকারী ডাক্তার অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে সিসিইউতে চিকিৎসা চলছে তাঁর। সাত দিন না খেয়ে ছিলেন তিনি।
পুজোতেও বহু মানুষ ঠাকুর দেখতে যাওয়ার পরিবর্তে বেছে নিয়েছেন ধর্মতলার অনশনস্থলকে। অনেকেই অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের দেখতে ধর্মতলায় ভিড় করেছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা সমাবেশেও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে মানুষের।
সিনিয়র ডাক্তারেরাও জুনিয়রদের পাশে আছেন। পাশে থাকার বার্তা দিতে গত কয়েক দিন ধরে তাঁরা প্রতীকী অনশন চালাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা তাঁরা না খেয়ে বসে আছেন ধর্মতলার অনশনমঞ্চে।