Coronavirus in Kolkata

আতঙ্কে মায়ের দেহ ফ্ল্যাটের বাইরেই রাখলেন ছেলে

সোমবার এমনই ঘটেছে লিলুয়ায়। ঘটনার পরে সকলে বলছেন, করোনা পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে প্রতিবেশীরা তো দূর, নিজের পরিজনেরা পর্যন্ত মৃতদেহ ঘরে ঢোকাতে আতঙ্ক বোধ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০২:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

বেশ কিছু দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন প্রৌঢ়া। সঙ্গে ছিল করোনার অন্য উপসর্গও। সোমবার ভোরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। রাস্তা থেকে ফিরে এলেও প্রৌঢ়ার দেহ বাড়িতে না-ঢুকিয়ে ফ্ল্যাটের দরজার সামনেই রেখে দিলেন পরিজনেরা। সে ভাবেই কয়েক ঘণ্টা পড়ে থাকার পরে পুরসভার শববাহী গাড়ি এসে দেহটি নিয়ে যায়।

Advertisement

সোমবার এমনই ঘটেছে লিলুয়ায়। ঘটনার পরে সকলে বলছেন, করোনা পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে প্রতিবেশীরা তো দূর, নিজের পরিজনেরা পর্যন্ত মৃতদেহ ঘরে ঢোকাতে আতঙ্ক বোধ করছেন। কয়েক দিন আগে বালির বীরেশ্বর চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এক মহিলা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। যে হেতু তাঁর ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাই ওই মহিলার দেহ আবাসনে ঢোকাতে বাধা দিয়েছিলেন পড়শিরা। অগত্যা প্রায় ছ’ঘণ্টা আবাসনের বাইরেই দেহটি পড়ে ছিল।

যদিও লিলুয়ার বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ার ছেলের দাবি, ‘‘মায়ের করোনা হয়েছে, সেটা তো পরে জেনেছি। তার আগেই উনি মারা গিয়েছেন। আমাদের কিছু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মৃতদেহ ঘরে রাখা হয় না। তাই বাইরে রেখেছিলাম।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: স্মার্ট কার্ডের বদলে কাগজের লাইসেন্স আবেদনকারীদের

আরও পড়ুন: করোনায় মৃতদের স্মৃতিতে ‘সৌধ’ তৈরির ভাবনা​

বছর চুয়ান্নর ওই প্রৌঢ়া থাকতেন একটি ফ্ল্যাটের দোতলায়। কয়েক দিন ধরেই তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল। গত রবিবার তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়। প্রৌঢ়ার ছেলে বলেন, ‘‘এ দিন ভোরে মায়ের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তখন বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তাতেই উনি মারা যান।’’

কিন্তু মাঝরাস্তা থেকে ফিরে এসে সকাল সাতটা নাগাদ ফ্ল্যাটের সামনে দেহ ফেলে রাখলেন কেন? কেউ কি ভিতরে নিয়ে যেতে বাধা দিয়েছিলেন? ওই যুবকের দাবি, ‘‘আমাদের কেউ বাধা দেননি। বরং প্রতিবেশীরা সকলেই এগিয়ে এসেছিলেন সহযোগিতার জন্য। সকাল ১০টা নাগাদ প্রাক্তন কাউন্সিলরকে ফোনে সব জানাই।’’ এর পরে ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর কৈলাস মিশ্র সত্যবালা আইডি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই প্রৌঢ়ার কোভিড-রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তিনিই প্রৌঢ়ার ছেলেদের বিষয়টি জানান। কৈলাস বলেন, ‘‘ওঁদের এটাও জানাই, পুরসভার গাড়ি এসে মৃতদেহ নিয়ে যাবে। তার ব্যবস্থা করতে পুলিশ ও পুরসভায় খবর দিই।’’

প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পরে এসে পৌঁছয় পুরসভার গাড়ি। তাতে চাপিয়েই দেহটি সৎকারে পাঠানো হয়। ঘটনার পরে প্রৌঢ়ার ফ্ল্যাট এবং এলাকায় জীবাণুনাশক ছড়ানো হয়। প্রৌঢ়ার দুই ছেলেরও লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement