প্রতীকী ছবি।
গত বছরের আমপানের তাণ্ডবে বিকল হয়ে গিয়েছিল শহরের রাজপথের অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা। বহু ক্যামেরার কেব্ল ছিঁড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে অধিকাংশ বিকল ক্যামেরা সারানো হলেও কিছু ক্যামেরা বাতিল করতে হয়। সেই ‘শূন্যস্থান’ পূরণ করতেই এ বার শহরের রাজপথে আরও ১০০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেও ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর।
গত কয়েক মাসে শহরের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ না পাওয়ায় তদন্তে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। কয়েকটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ফুটেজ না থাকায় পালিয়ে যাওয়া গাড়িতেও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া রাতের শহরে বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য তো আছেই। এর সঙ্গে অপরাধমূলক ঘটনা আটকাতে পথে আরও সিসি ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তার কথা বার বার বলেছেন লালবাজারের কর্তারা।
আগেই শহরের রাস্তায় ‘অটোমেটিক নম্বর প্লেট রেকগনিশন’ (এএনপিআর) ক্যামেরা বসানো হয়েছিল, যার সাহায্যে সহজেই বেপরোয়া গাড়ির নম্বর প্লেটের ছবি তোলা যেত। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি বছরই শহরের পথে বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে ৫,৭০,৯৩৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬,০৬,৮৪০টিতে। তবে ২০২০ সালে লকডাউনের ফলে সংখ্যাটা তুলনায় কম হয়। তবে এর পরেও বহু রাস্তায় হাই স্পিড ক্যামেরা না থাকায় কিছু বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছিল না। তাই নতুন ১০০টি সিসি ক্যামেরাও তার দু’দিকে সাত মিটারের মধ্যে দিয়ে যাওয়া যে কোনও গাড়ির নম্বর প্লেটের ফুটেজ তুলতে পারবে। সেই সঙ্গে অনেক বেশি সংখ্যক তথ্য জমা রাখতে পারবে।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের রাস্তায় বর্তমানে ১৬০০টিরও বেশি ক্যামেরা রয়েছে। তবে আমপানের পরে অনেক রাস্তারই সিসি ক্যামেরা বিকল হয়ে যায়। ফলে বহু রাস্তাতেই সিসি ক্যামেরার নজরদারি না থাকায় ট্র্যাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে লালবাজারের গোয়েন্দাদের তদন্তে বেগ পেতে হচ্ছিল। লালবাজারের এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, শুধু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ না পাওয়ায় অনেক ঘটনার তদন্ত বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। পুলিশকে এড়িয়ে পালিয়ে গিয়েছে অপরাধী। নতুন সিসি ক্যামেরাগুলি শহরের নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করবে, তাতে সন্দেহ নেই। এ ছাড়া অপরাধীদের চিহ্নিত এবং অপরাধমূলক ঘটনায় তদন্তে সাহায্য করবে।’’
সূত্রের খবর, বাইপাস, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মৌলালি-সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এই নতুন ক্যামেরা বসানো হচ্ছে, যার জন্য খরচ হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই ৭০টির বেশি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ। কয়েক দিনের মধ্যে বাকিগুলিও বসানোর কাজ শেষ হবে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘আশা করা যায়, এই ক্যামেরাগুলির সাহায্যে শহরের রাস্তায় বেপরোয়া গাড়িগুলিকে চিহ্নিত করাও সহজ হবে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী কালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াও আরও সহজ হবে।’’