ফাইল চিত্র
অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার— সবাইকেই এ বার গুলি চালানো অনুশীলন করার নির্দেশ দিল লালবাজার। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহ থেকেই কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে (পিটিএস) সেই অনুশীলন শুরু হয়েছে। কলকাতা পুলিশের কর্মীরা গুলি চালানোর অনুশীলন বরাবরই করতেন। কিন্তু বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সব স্তরের কর্মীরা নিয়মিত সেই অনুশীলনে যেতেন না।
পুলিশকর্মীদের একাংশের ধারণা, এই নির্দেশের পিছনে রয়েছে নিউ টাউনের ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসনের সাম্প্রতিক ঘটনা। সেখানে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয় পঞ্জাবের দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার। ওই ঘটনায় বাহিনীর এক সদস্য জখম হন। মোট ৩৬ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল এসটিএফ। কলকাতায় গত দশকে এনকাউন্টারের তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বাহিনীর সকলেই যাতে প্রয়োজনে সংঘর্ষে শামিল হতে পারেন, তার জন্যই সম্ভবত অনুশীলনের এই নয়া নির্দেশ।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, অফিসারদের সকলকেই গুলি চালানো অনুশীলন করতে বলা হয়েছে। সেই মতো অনুশীলন করছেন তাঁরা। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই অনুশীলনে প্রতিদিন থানাগুলির অফিসারদের জন্য সকালের তিন ঘণ্টা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিন দফায় ২০ জন করে তাতে অংশ নিচ্ছেন। পরে বেলার দিকে দু’দফায় ওই অনুশীলন চলছে পিটিএসের ফায়ারিং রেঞ্জে। থানা বাদে কলকাতা পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের অফিসারেরাও প্রতি দফায় ২০ জন করে অনুশীলনে অংশ নিচ্ছেন। নাইন এমএম পিস্তল থেকে মোট দশ রাউন্ড করে গুলি চালাতে হচ্ছে অফিসারদের। আজ, শনিবার প্রথম দফার অনুশীলন শেষ হওয়ার কথা। ফের সোমবার থেকে তা শুরু হবে।
সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী যথা কমব্যাট, কমান্ড কিংবা ব্যাটালিয়নের সদস্যদের নিয়মিত ভাবে গুলি চালানোর ওই অনুশীলন করতে হয় পিটিএসে। এর বাইরে কলকাতা পুলিশের যে বিভিন্ন ইউনিট বা ডিভিশন রয়েছে, সেখানকার কর্মীরাও ওই অনুশীলন করেন। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে অনুশীলন বাধ্যতামূলক না-থাকায় সকলে নিয়মিত অংশ নিতেন না বলেই পুলিশের বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। উত্তর কলকাতার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, তিনি গত দশ বছরে এই প্রথম বার গুলি চালানোর অনুশীলন করছেন। আবার দক্ষিণ কলকাতার এক পুলিশ অফিসার জানালেন, বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরে এ নিয়ে চতুর্থ বার এমন অনুশীলনে যোগ দিলেন তিনি।
পুলিশের একাংশের মতে, লক্ষ্যভেদের এই অনুশীলন কিন্তু বাহিনীর সদস্যদের কাজের মধ্যেই পড়ে। আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর অভ্যাস যাতে চলে না যায়, তার জন্যই এই অনুশীলন নিয়মিত করে যাওয়া উচিত। কিন্তু অভিযোগ, অনেকেই নিয়মিত তাতে অংশ নিতেন না।
কিন্তু এ বার লালবাজার প্রতিটি ইউনিটকে তাদের অফিসারদের নামের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে। যাতে বাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার— সকলেই লক্ষ্যভেদের অভ্যাস বজায় রাখতে পারেন। সেই মতো প্ৰতিটি ইউনিটই অফিসারদের নামের তালিকা তৈরি করেছে। প্রতিটি থানা থেকে প্রতিদিন দু’জন করে অফিসারকে ওই অনুশীলনে পাঠানো হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, সিনিয়র ডিসি এবং ডিসি (প্রথম ব্যাটালিয়ন) পুরো বিষয়টির দেখভাল করছেন।