ফাইল চিত্র।
প্রতিদিনই শহরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে লালবাজারের পুলিশকর্তাদের কপালে। এই পরিস্থিতিতে মত্ত চালক ধরতে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারের ব্যবহার আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল লালবাজার। তবে দিনে তো বটেই, রাতের শহরেও পুলিশের নাকা-তল্লাশি চলবে আগের মতোই। তখন কেউ মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছেন বলে সন্দেহ হলেই পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে পাঠাতে পারে পুলিশ।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ শহরের ট্র্যাফিক গার্ডগুলিতে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ বলে যাওয়া একটি বার্তায় জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে। এর পরে তড়িঘড়ি সে রাতেই শহরের সমস্ত নাকা-তল্লাশির জায়গা থেকে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার সরিয়ে ফেলা হয়। উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ওই রাতেই এক মত্ত চালককে ধরেছিলাম। ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারের ব্যবহার বন্ধ করতে বলায় তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। সেখানে প্রমাণ হয়, তিনি মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন।’’ শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘যে হারে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তাতে এটা খুবই ভাল সিদ্ধান্ত। কাউকে ফুঁ দিতে বললেই তাঁর লালা আমাদের দিকে উড়ে আসছিল।’’
এই পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে গত কয়েক দিনে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদেরই বড় অংশ অভিযোগ তোলেন, এই পরীক্ষার জন্য যন্ত্রের মুখে যে পাইপ লাগানোর প্রয়োজন তা লালবাজারের কাছে বার বার চেয়েও মিলছিল না। ফলে অনেককেই ডাবের বা ঠান্ডা পানীয়ের স্ট্র কিনে এনে যন্ত্রের মুখে লাগিয়ে পরীক্ষা চালাতে হচ্ছিল। এর মধ্যেই বড়দিন বা বর্ষবরণের রাতে এক সঙ্গে অনেক গাড়ি পরীক্ষা করার চাপ থাকায় ওই স্ট্র না বদলেই তাতে একাধিক জনকে ঠোঁট লাগিয়ে ফুঁ দিতে বলার অভিযোগও উঠেছে। যা করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে তো বটেই, এমনি সময়েও অত্যন্ত সংক্রামক বলে চিকিৎসকদের দাবি। তবে লালবাজারের কর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, সব দিক ভেবে এই মুহূর্তে এই যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা বলে কেউ যদি ভাবেন যে, মত্ত অবস্থায় গাড়ি বা মোটরবাইক চালালেও ধরা পড়বেন না, তা হলে তিনি ভুল ভাবছেন। নাকা-তল্লাশির সময়ে তো বটেই, গাড়ি বা মোটরবাইক বেসামাল হচ্ছে দেখলেই চালককে দাঁড় করানো হবে। মদের গন্ধ পেলে তো কথাই নেই, সন্দেহ হলেই তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষায় কেউই ছাড় পাবেন না। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানান, মত্ত অবস্থায় গাড়ি বা মোটরবাইক চালাচ্ছেন প্রমাণিত হলেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৫ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাড়ি বা মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করে থানার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে এক বার আইন ভাঙায় ২০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। একাধিক বার একই অপরাধ করে ধরা পড়লে জরিমানা হতে পারে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, শুধু ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারের ব্যবহার বন্ধ রাখাই নয়, এর আগে গাড়ি বা মোটরবাইক চালকদের সঙ্গে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের ছোঁয়াচ এড়াতে সাইটেশন কেস করার উপরেও জোর দিতে বলা হয়েছে।