সূর্যোদয়ের সময় ধরলে রবিবারই অক্ষয় তৃতীয়া পড়ছে। তবে, শনিবার তিথির সূচনা হওয়ায় বাঙালির উদ্যাপন শুরু হয়ে গেল। ফাইল ছবি।
নতুন বঙ্গাব্দের ক্যালেন্ডার বলছে, শুভ দিনটি আজ, রবিবার। সূর্যোদয়ের সময় ধরলে রবিবারই অক্ষয় তৃতীয়া পড়ছে। তবে, শনিবার তিথির সূচনা হওয়ায় বাঙালির উদ্যাপন শুরু হয়ে গেল। মার্বেল প্যালেসের মল্লিকবাড়ির কর্তা হীরেন মল্লিকের মতো প্রবীণেরা অবশ্য পারিবারিক হালখাতা বা গৃহদেবতার পুজো রবিবার সারতে চান। “সকাল ৮টা ১৭-য় তিথি ছেড়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে পুজো সারতে হবে”, বললেন মল্লিকমশাই। শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথদেবের রথ নির্মাণের কাজও রবিবারই শুরু হচ্ছে।
অক্ষয় তৃতীয়া আবার জগন্নাথদেবের চন্দনযাত্রা বা সরোবরে অবগাহন করে শীতল হওয়ারও দিন। শনিবার মুদিয়ালির জগন্নাথ মন্দিরে পুজো হলেও পুরীতে চন্দনযাত্রা রবিবারই ধার্য হয়েছে। জগন্নাথদেবের প্রতিনিধি হিসাবে মদনমোহন, ভূদেবী, শ্রীদেবী, শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ, পাঁচ জন মহাদেব নরেন্দ্র সরোবরে যাবেন। তবে, এ যুগের ধারা মেনে সমাজমাধ্যমে অক্ষয় তৃতীয়া নিয়ে চর্চা চলছে। অনেকেই বলে দেবেন, অক্ষয় তৃতীয়া হল সত্য যুগের সূচনা, কুবেরের লক্ষ্মীলাভের দিন, ভগীরথের হাত ধরে গঙ্গার মর্ত্যে আবির্ভাব বা বিষ্ণুর পরশুরামের জন্মতিথি। অনেকের মুখে আবার ভবিষ্যপুরাণের কৃপণ ব্রাহ্মণ ও তাঁর পুণ্যবতী স্ত্রীর কাহিনি। ব্রাহ্মণ তৃষ্ণার্তকে জল না-দিয়ে নরক দর্শন করেছিলেন। পরের জন্মে প্রায়শ্চিত্ত, কুম্ভস্নানাদি করে তাঁকে পাপ মোচন করতে হয়। কৃষ্ণ, সুদামার কাহিনিও বলছে, মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের দরিদ্র বন্ধু সুদামার নিয়ে আসা অসামান্য উপহারের কথা। এই দিনটি তাই কেনাকাটা বা দানধ্যানের জন্য শুভ। জলদানের পুণ্যলোভে শহরে জলসত্র অবশ্য এখন তত দেখা যায় না। তবে, সোনার দোকানে কেনাকাটা ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।
বৌবাজারের এক দোকানের কর্ত্রী সোনাক্ষী সরকার বলছিলেন, “অন্য দিনের তুলনায় বিক্রি কম করে ২৫-৩০ শতাংশ বেশি ঠিকই। তবে, আজকের বাঙালির ঝোঁকটা ধনতেরসেই বেশি।” একই সুর ‘স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতি’র ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট সমরকুমার দে-র গলায়। তাঁর কথায়, “শুভ দিনে সোনা কেনার তাগিদে পয়লা বৈশাখ থেকে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্তও লোকে সোনা কেনে।” স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত, শনি-রবি, তার উপরে অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ যোগ, দুটোই সোনার কারবারের জন্য অনুকূল। তবে, ধনতেরসে রাত ১২টা পর্যন্ত সোনার দোকান খোলা থাকলেও অক্ষয় তৃতীয়ায় অত ভিড় নেই। সাবেক যুগের অনেক কিছুই পাল্টেছে। তবে, পুরনো অক্ষয় তৃতীয়ার সুরভি এখনও বহাল শহরে।