—প্রতীকী চিত্র।
স্কুলে আসার পথে লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া সৌরনীল সরকারের। বেহালা চৌরাস্তায় সেই ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকেরা ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারির অভাবের কথা তুলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ বার সংশ্লিষ্ট স্কুলের পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের ট্র্যাফিক নিরাপত্তার পাঠ দিল কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। সোমবার সৌরনীলের স্কুল বড়িশা উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দির (প্রাথমিক বিভাগ)-এর তরফে স্কুলেই এই সংক্রান্ত এক কর্মসূচি হয়। পথের সুরক্ষা-বিধি মেনে চলতে হলে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের কোন কোন দিকে নজর রাখতে হবে, তা নিয়ে আলোকপাত করেন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এসি অলোক সান্যাল এবং ডায়মন্ড হারবার ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি অমলেন্দু চক্রবর্তী। এর পাশাপাশি, সৌরনীলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিল স্মরণসভা ও রক্তদান শিবির।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনের আলোচনায় পুলিশ আধিকারিকেরা বিশেষ ভাবে জোর দেন পড়ুয়াদের হেলমেট পরার উপরে। বাইক বা স্কুটারে চেপে স্কুলে আসার সময়ে যাতে অভিভাবকদের পাশাপাশি প্রত্যেক পড়ুয়া হেলমেট পরে, তা তাদের বলা হয়। একই সঙ্গে স্কুলে যাতায়াতের পথে সিগন্যাল মেনে এবং জ়েব্রা ক্রসিং দিয়ে যাতে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তা পারাপার করে, সে দিকে খেয়ার রাখার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেন পুলিশকর্তারা। এক পুলিশকর্তা জানান, এই স্কুলের অনেক পড়ুয়া তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে সাইকেলে আসে। রাস্তার কোন দিক দিয়ে সাইকেল চালানো উচিত, সেটাও বলা হয় অভিভাবকদের।
আলোচনায় উঠে আসে ‘ব্লাইন্ড স্পট’-এর প্রসঙ্গও। উল্লেখ্য, গাড়িচালক তাঁর আসনে বসলে গাড়ির ঠিক সামনের এবং দু’পাশের কিছু জায়গা তিনি গাড়ি চালানোর সময়ে দেখতে পান না। ফলে ওই ‘ব্লাইন্ড স্পট’-এ আচমকা কোনও বাইক বা পথচারী এসে পড়লে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সৌরনীলের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তেও উঠে এসেছিল, তাকে নিয়ে তার বাবা যে রাস্তা পেরোচ্ছেন, ‘ব্লাইন্ড স্পট’-এ পড়ে যাওয়ার কারণে লরিচালক তা দেখতে পাননি।
বড়িশা উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দির (প্রাথমিক বিভাগ)-এর অধ্যক্ষ অর্জুন রায় জানান, ওই পড়ুয়ার মৃত্যু তাঁদের একাধিক শিক্ষা দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ যেমন ব্যবস্থা নিয়েছে, তেমনই নাগরিকদেরও পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হতে হবে।’’
পুলিশকর্তাদের মতে, এ দিনের আলোচনায় অভিভাবকেরা পুলিশের সঙ্গে সহমত হয়েছেন। ট্র্যাফিক ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে সব অভিভাবককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে যেন তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোন। স্কুল সূত্রের খবর, এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌরনীলের মা-ও। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে সৌরনীলের বাবার চিকিৎসার জন্য তাঁর হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হয়।