বিনিময়: বণিকসভার আলোচনায় পড়ুয়া এবং পুলিশ আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
মহিলাদের উপরে অ্যাসিড হামলার নিরিখে এ রাজ্য দেশে প্রথম বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)। খাস কলকাতায় সে ভাবে অ্যাসিড হামলার ঘটনা না-ঘটলেও উদ্বেগের কথা শোনাল পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার নিরাপদ শহর গড়ার জন্য এক বণিকসভায় স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কাছ থেকে ‘পরামর্শ’ শুনতে বসেছিল কলকাতা পুলিশ। সেখানেই বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের দুই ছাত্রী শহরের খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রিতে রাশ টানার ক্ষেত্রে পুলিশের সক্রিয়তা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে।
তাঁদের বক্তব্য, কার্যত আনাজের মতোই অ্যাসিড বিক্রি হয়। তা কিনেই মেয়েদের আক্রমণ করা হয়। শুধু তল্লাশি নয়, দু’পয়সা লাভের জন্য যাতে বেআইনি ভাবে অ্যাসিড বিক্রি না হয় সেটা দোকানিদের বোঝানো প্রয়োজন পুলিশের। অ্যাসিড বিক্রি নিয়ে সচেতনতার পাশাপাশি অন্ধকার গলিতে মহিলাদের নিরাপত্তা ও নাইট ডিউটি করে ফেরা কর্মরতাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিও প্রয়োজন বলে ওই দুই ছাত্রী জানিয়েছে। ট্রেন-বাস এবং কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা রুখতে এবং পথে রাতবিরেতে নিরাপত্তা বাড়াতে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথাও বলেছে তারা।
এ দিনের অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের বেশির ভাগ পরামর্শই ছিল প্রযুক্তিনির্ভর। বেথুনের দুই পড়ুয়া সেই পথে না গিয়ে সমাজের বাস্তবিক সমস্যা তুলে ধরায় অনেকেই প্রশংসা করেছেন। ওই দুই পড়ুয়া এ-ও বলছে, ‘‘সবার স্মার্টফোন থাকে না, তাই টোল-ফ্রি নম্বর থাকা উচিত। যাতে বিপদে পড়লে সাধারণ মোবাইল থেকেও পুলিশকে খবর দেওয়া যায়।’’ পুলিশ যাতে এ সব অপরাধ দমনে আরও শক্ত হয় সেই দাবিও জানিয়েছে তারা। ওই দলের এক সদস্যার কথায়, ‘‘পথে ইভ-টিজিংয়ের শিকার হলে মেয়েরা যাতে ‘পুলিশকে খবর দেব’, এই ভয়টুকু দেখাতে পারে সেটাই চাই।’’
নারী নিগ্রহ রুখতে মেয়েদের সচেতনতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কিশোর ও তরুণ প্রজন্মকেও সচেতন করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে এপিজে স্কুলের পড়ুয়ারা। সে ব্যাপারে অনুষ্ঠানেই সহমত পোষণ করেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) দময়ন্তী সেন।
সেন্ট জেভিয়ার্স ও স্কটিশ চার্চ কলেজের দুই পড়ুয়া পর্যটকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে বলেছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক বছরে শহরে মোট দুর্ঘটনা কমলেও পথচারীর মৃত্যু বেড়েছে। এর পিছনে অনেকেই ফুটপাতের দখলদারির অভিযোগ করেছেন। ফুটপাত হকারেরা দখল করায় পথচারীদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। এ দিন ধর্মতলার লরেটো ডে স্কুলের পড়ুয়ারা জানায়, তারাই এ সমস্যার শিকার। পুলিশ অবশ্য লরেটো স্কুলের ওই সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে পড়ুয়াদের। বাকি পড়ুয়াদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তির উপরে জোর দিয়েছে।
পুলিশকর্তাদের মতে, নতুন প্রজন্ম শহরের নিরাপত্তা নিয়ে কী ভাবছে তা জানতে এই ধরনের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মধ্যেই কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, ‘‘সব পরামর্শ বাস্তবায়িত করার উপযোগী হবে না। কিন্তু নতুন প্রজন্মকে চিন্তাশীল করা প্রয়োজন।’’ পরামর্শ শুনতে এ দিন হাজির ছিলেন প্রবীণ আধিকারিকদের পাশাপাশি সোমনাথ ঘোষ, নিরুপম দত্তের মতো তরুণ প্রজন্মের পুলিশ আধিকারিকেরাও। নতুন চিন্তা ভাবনার ‘প্রতিযোগিতায়’ প্রথম হয়েছে স্কটিশ চার্চ ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের দুই পডুয়া।