কলকাতার দূষণ।
দীপাবলিতে দেশের অন্য মেট্রোপলিটন শহরগুলির তুলনায় কলকাতায় বাতাসের মান ভাল ছিল বলে জানিয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বাস্তব তথ্যও সে কথা জানাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, দীপাবলির সময়ে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বইয়ের মধ্যে কলকাতার বাতাসের মান ছিল সব চেয়ে ভাল। সিত্রাং-এর সৌজন্যে বৃষ্টি হওয়ার কারণে দূষণ কমলেও রাজ্যের যেখানে বৃষ্টি হয়নি, সেখানকার দূষণও অস্বস্তিজনক নয় বলে জানিয়েছিল পর্ষদ।
কিন্তু, দীপাবলি মিটতেই দেখা গেল উলটপুরাণ! কারণ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ের বাতাসের মান যেখানে ‘সন্তোষজনক’ থেকে ‘ভাল’র মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, সেখানে কলকাতার বাতাসের মান ‘ভাল-র সঙ্গ ছেড়ে ‘মাঝারি’র হাত ধরেছে।কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য জানাচ্ছে, ১-৭ নভেম্বর, অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে কলকাতায় বাতাসের মান ‘মাঝারি’। বায়ুসূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ১০৫-১৯৬ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাপমাত্রা এখনও তেমন ভাবে নামেনি। তাতেই বাতাসের মান ‘মাঝারি’ হওয়া শুরু হয়েছে। এর পরে তাপমাত্রা কমলে দূষণের মাত্রা কতটা বাড়বে?
এমনিতে শীতকালে আবহাওয়াজনিত কারণে দূষণের মাত্রা বাড়েই। সেখানে কারও কিছু করার থাকে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন পর্ষদকর্তাদের একাংশ। কারণ, এক দিকে বৃষ্টি হবে না। অন্য দিকে, তাপমাত্রা কমার কারণে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম২.৫) উপর থেকে ভূপৃষ্ঠের কাছে নেমে আসবে। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘এগুলো প্রকৃতিগত বিষয়। আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’’
পরিবেশ মহলের একাংশও এই যুক্তি স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রশ্ন, যেগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে, সেখানেও যথাযথ কাজ হয়েছে কি? দূষণ নিয়ন্ত্রণ তো সারা বছরের ব্যাপার, সেটা করা হয়েছে কি? এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘তাপমাত্রা কমলে ধূলিকণা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি নেমে আসে, এটা তো সত্যি কথা। সেগুলি ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। কিন্তু সারা বছর ধরে দূষণ নিয়ন্ত্রণের যে সব প্রকল্প গ্রহণ করা হয় বা হয়েছে, সেগুলি ঠিক মতো রূপায়িত হয়েছে কি? না কি, সবটাই প্রকৃতির দোষ বলে একটা যুক্তি খাড়া করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে?’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট কোনও একটি দিনে বা দীপাবলির সময়ে অন্য মেট্রোপলিটন শহরগুলির তুলনায় কলকাতার বাতাসের মান ভাল থাকল, পর্ষদের এই দাবির কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ, সারা বছর ধরে কলকাতার বাতাসের মানের কী অবস্থা, তা শ্বাসযোগ্য থাকছে কি না— সে সবের উপরেও জোর দেওয়া দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘শীতকালে প্রকৃতিগত কারণে দূষণ বাড়ে বলে না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু পর্ষদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে দূষণের মাত্রা যে বৃদ্ধি পায়, তার কী হবে? বায়ুদূষণ মামলাতেই রাজ্য সরকারের জরিমানা হয়েছিল। তার পরে কলকাতা, হাওড়ার দূষণ কমেছে না বেড়েছে? কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানাক পর্ষদ।’’
আর এক পরিবেশবিদের বক্তব্য, ‘‘সারা বছর ইমারতি দ্রব্য, রাস্তার ধুলোর কারণে যে দূষণ হয়, তা তো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। যানবাহনের দূষণ না হয় বাদই দেওয়া গেল! বছরভর এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে না আর শীতে দূষণ বাড়ার জন্য প্রকৃতিগত বিষয়গুলিকে বড় করে দেখানো হবে, সেটা ঠিক নয়।
যদিও পর্ষদের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আমাদের হাতে যতটুকু আছে, শিল্পক্ষেত্রের দূষণ, যানবাহনের দূষণ, রাস্তার ধুলো, ইমারতি দ্রব্যের দূষণ— সব নিয়ন্ত্রণে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।’’
তবে সেই চেষ্টায় কতটা ফল হবে, তা নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না অনেকেই।