Crime

যাদবপুরের এটিএম জালিয়াতি কাণ্ডে দিল্লি থেকে গ্রেফতার ১ রোমানীয়

ডিসেম্বরের শুরুতে ওই প্রতারণার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:১৭
Share:

ধৃত রোমানীয়।—নিজস্ব চিত্র।

এটিএম গণপ্রতারণার ঘটনায় এক রোমানীয়কে পাকড়াও করল কলকাতা পুলিশ। ধৃতের নাম সিলভিউ ফ্লোরিন স্পিরিডন। রোমানিয়ার কনস্ট্যান্টার বাসিন্দা সে। সোমবার দিল্লির গ্রেটার কৈলাস এলাকার একটি আবাসন থেকে তাকে গ্রেফতার করেন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার গোয়েন্দারা। তবে তার দুই সঙ্গী পুলিশের হাত ফস্কে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

Advertisement

রীতিমতো থ্রিলার ছবির কায়দায় অভিযুক্তকে পাকড়াও করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, দুই সঙ্গীকে নিয়ে গ্রেটার কৈলাস-১ এলাকার একটি আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল সিলভিউ। তাদের ধরতে সেখানে তক্কে তক্কে ছিলেন গোয়েন্দারা। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ আবাসন থেকে কিছুটা দূরে একটি এটিএম-এ টাকা তুলতে আসে অভিযুক্ত। আগে থেকেই সেখানে গোয়েন্দারা মোতায়েন ছিলেন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একটি দল। এটিএম-এ ঢুকে কোনও রকমে তা টের পেয়ে যায় অভিযুক্ত। সঙ্গে সঙ্গে এটিএম থেকে বেরিয়ে দৌড় লাগায় সে। কিছুদূর গিয়ে একটি অটোয় উঠে পড়ে।

সেই অটোটিকে তাড়া করে গ্রেটার কৈলাস এলাকায় পৌঁছে যায় পুলিশও। কিন্তু তত ক্ষণে সিলভিউ তাদের নজর এড়িয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এলাকার কোনও বাড়িতেই সে লুকিয়ে রয়েছে বলে সন্দেহ জাগে পুলিশের। সেই মতো বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু হয়। তাতেই ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে সিলভিউয়ের হদিশ মেলে। কিন্তু পুলিশ আশার খবর পেয়ে তত ক্ষণে চম্পট গিয়েছে তার দুই সঙ্গী। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিলভিউকে শনাক্ত করে পুলিশ। তার কাছ থেকে স্কিমিং ডিভাইসের একাধিক সরঞ্জাম, ম্যাগনেটিক চিপ্‌স, ব্যাটারি, পিন হোল ক্যামেরা-সহ নানা জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। খোঁজ চলছে তার দুই সঙ্গীরও।

Advertisement

ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী, যদুবাবুর বাজারে হঠাৎ পরিদর্শন​

ডিসেম্বরের শুরুতে ওই প্রতারণার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। যাদবপুর থানা এলাকার একের পর এক ব্যাঙ্ক গ্রাহক দেখেন যে, তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১ ডিসেম্বর প্রচুর টাকা তোলা হয়েছে। পরে একই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বহু গ্রাহক থানায় অভিযোগ জানান যে, পরের দু’দিন অর্থাৎ ২ এবং ৩ ডিসেম্বরও বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠেছে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে টাকা উঠেছে দিল্লির কোনও একটি এটিএম থেকে।

এর পর ক্রমশ প্রতারিতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। চারু মার্কেট থানা এলাকারও অনেকে একই ধরনের অভিযোগ জানান পুলিশে। অভিযোগ আসে উল্টোডাঙা, কড়েয়া এবং নেতাজিনগর থানা এলাকা থেকেও। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০টি অভিযোগ দায়ের হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, স্কিমিং পদ্ধতিতে ওই জালিয়াতি হয়েছে। অর্থাৎ কোনও এটিএম মেশিনে কার্ড নকল করার যন্ত্র বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য চুরি করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার গোয়েন্দারা একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড এবং সুলেখার কাছে দু’টি এটিএম চিহ্নিত করেন। ওই দু’টি এটিএমে এ বছরের এপ্রিলে স্কিমিং মেশিন পাওয়া গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ খারিজ করল হাইকোর্ট​

সেই সূত্র ধরেই গোয়েন্দাদের ধারণা হয়, এর পিছনে কলকাতায় আগে ধরা পড়া রোমানীয় জালিয়াতদের কোনও চক্র বা তুরস্কের জালিয়াতদের চক্র থাকতে পারে। কারণ দিল্লিতে যে এটিএমগুলো থেকে টাকা তোলা হচ্ছিল সেখানকার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে বিদেশি হিসাবেই চিহ্নিত করেন গোয়েন্দারা। তাঁরা সন্দেহ করেন, ওই বিদেশিদের সঙ্গে দেশের জালিয়াতদের গাঁটছড়া থাকতে পারে।

ওই টুকরো টুকরো সূত্র ধরেই তদন্ত এগোতে থাকেন গোয়েন্দারা। এ দিন সেই তদন্তেই সাফল্য পেলেন গোয়েন্দারা। ধরা পড়ল এই চক্রের এক সদস্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement