নিহত ঊর্মিলা কুমারী। —নিজস্ব চিত্র।
দুটো বাড়ির মধ্যে দূরত্ব মেরেকেটে ১০ ফুট। দু’বাড়ির জানলাও একেবারে মুখোমুখি। এ বাড়িতে কোনও আওয়াজ হলে ও বাড়ি থেকে তা স্পষ্ট শুনতে পাওয়ার কথা। যে ঘরে খুন হয়েছিলেন ঊর্মিলা কুমারী, পাশের বাড়িতে ঠিক তার উল্টো দিকের ঘরেই থাকেন প্রদীপকুমার ঘোষ। অথচ সে দিন রাতে তিনি কোনও শব্দই পাননি বলে জানাচ্ছেন ওই প্রতিবেশী!
ওই বৃদ্ধার শরীরে দু’ডজনেরও বেশি গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। আড়াআড়ি ভাবে চিরে দেওয়া হয়েছিল তাঁর পেট। বেরিয়ে এসেছিল নাড়িভুঁড়ি-যকৃত। ধড় থেকে আলাদা করা হয়েছিল মুন্ডুও। গোয়েন্দা আধিকারিকের দাবি, এ ভাবে যদি কাউকে খুন করা হয়, তা হলে তিনি প্রচণ্ড চিৎকার করবেন। গড়িয়াহাটের গরচা ফার্স্ট লেনে সব বাড়িই খুবই কাছাকাছির মধ্যে। কিন্তু, প্রতিবেশীরা কেন সেই আওয়াজ শুনতে পেলেন না? এমনকি, ওই বাড়িরই দোতলায় থাকেন বাড়িমালিকের পরিবার। তাঁরাও কেন কিছু শুনতে পেলেন না? এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। তবে কি খুন করার আগে ওই বৃদ্ধাকে অচৈতন্য করা হয়েছিল?
মৃতার ছোটছেলে বলরাম এবং সনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বড় ছেলে মারা গিয়েছেন। তার মেয়ে ঘটনার রাতে ঠাকুমাকে খাইয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন পুলিশ আধিকারিকরা। প্রাথমিক ভাবে আক্রোশের ঘটনা মনে করা হলেও, নানা দিক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসাররা। গরচায় বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় দু’তিন জন জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর বড় পুত্রবধূ এবং নাতনিকে। ঘটনা ঘটরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার কিনারা করে ফেলল পুলিশ। ঠিক কী কারণে ওই বৃদ্ধাকে খুন করা হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার, আরও নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, লুট এবং ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতারের বিষয়টি টুইট করে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা।
অনুজ শর্মার টুইট।
ঘটনার দিন রাতে ঊর্মিলা কুমারীকে নাতনির নাম ধরে ডাকতে শুনেছিলেন বাড়িমালিকের জামাই-মেয়ের পরিবার। তাঁদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বাড়ির দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা হলেও ৩০০ টাকা ভাড়া দিত ওই বৃদ্ধার পরিবার। মাঝেমধ্যে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে ঝামেলা লেগে থাকত। ছোটছেলের স্ত্রীর সঙ্গেও ঝামেলা হত বলে জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা।
প্রদীপবাবু অনেক সময় জানলার এ পার থেকে কথা বলে ঝামেলা আটকানোর চেষ্টা করতেন। অনেক সময় ঊর্মিলা কুমারী এবং প্রদীপবাবু জানলা এ পার ও পার থেকে পরস্পরের মধ্যে কথাও বলতেন। ঘটনার আগের দিনও দু’জনের মধ্যে কথা হয় বলে জানিয়েছেন প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘জানালার পাশেই শুয়ে থাকি। আমি তো অসুস্থ। এক দিন আগেও ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। মুখোমুখি জানলা। ও ভাবে মারা হল, অথচ কোনও আওয়াজ পেলাম না!’’
বাড়িমালিকের ছেলে সুদীপ দাস দোতলায় থাকেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই দিন দুপুরে কাজ থেকে এসে বাড়ি ঢুকে গিয়েছিলেন। ছেলেকে স্কুল থেকে এনে তাঁর স্ত্রীও বাড়িতে ছিলেন। তার পর আর বাইরে বার হননি। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তারা ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁরাও কোনও রকম আওয়াজ পাননি।