প্রতীকী ছবি।
এ যেন কুমিরের মুখে হাত ঢুকিয়ে মাংস নিয়ে আসার গল্প।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত অক্টোবরে এক বেসরকারি সংস্থার কর্তাকে কুরিয়র মারফত কার্ড পৌঁছে দেওয়ার টোপ দিয়ে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল ‘জামতাড়া গ্যাং’-এর জালিয়াতেরা। সেই ঘটনায় চক্রের যে অ্যাকাউন্টে জালিয়াতির টাকা জমা পড়েছিল সেখান থেকে ওই পরিমাণ টাকা ফেরত এনেছেন ভবানীপুর থানার তদন্তকারীরা। তবে অভিযুক্ত এখনও অধরা। তার নামে শুক্রবার আলিপুর আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, কুরিয়রে ডেবিট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল বেসরকারি সংস্থার এক কর্তার। কিন্তু কার্ড না-পেয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে তিনি কুরিয়র সংস্থার অফিসের একটি ফোন নম্বর পান। সেখানে ফোন করলে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয়। বলা হয়, তার মাধ্যমে অনলাইনে ১০ টাকা পাঠাতে। নিজের মোবাইলে ওই সুবিধা না-থাকায় এক বন্ধুর মোবাইল থেকে সেই টাকা পাঠান। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা উধাও হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই নম্বরটি সংশ্লিষ্ট কুরিয়র সংস্থার নয়। সংস্থার নাম ভাঁড়িয়ে নম্বর দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে জালিয়াতেরা।
তদন্তকারীরা জানান, ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় বসে এই চক্র চালায় জালিয়াতেরা। সেই সূত্রেই নাম হয়েছে জামতাড়া গ্যাং। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, একটি অনলাইন ওয়ালেট মারফত টাকাটি জামতাড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সাদাব আনসারি নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। ব্যাঙ্কে চিঠি দিয়ে অ্যাকাউন্টটি ‘ফ্রিজ’ করে টাকা ফেরত আনা গিয়েছে। সাদাবের খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাদাবের অ্যাকাউন্টে শুধু এই ব্যক্তির টাকাই নয়, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের বিভিন্ন ব্যক্তির টাকাও এসে জমা হয়েছিল। ‘ফ্রিজ’ করার নির্দেশ পাঠানোর পরেও তদন্ত চলার মাঝে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে। সেই বিষয়টি পুলিশ ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শীর্ষ মহলে জানিয়েছে। জানা যায়, ব্যাঙ্কের একাংশের মদতে অ্যাকাউন্টে মাঝের ওই লেনদেন হয়েছে। ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জামতাড়া শাখার এক আধিকারিককে বদলি করা হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের দাবি, ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হলেও যাতে টাকা খোয়া না-যায় তাই ‘সাইবার সেফ’ বলে একটি ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হয়েছে। এর পাশাপাশি থানাগুলিকেও এই ধরনের ঘটনা গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ যে কার্যকর হচ্ছে ভবানীপুর থানা তার উদাহরণ। লালবাজার সূত্রের দাবি, থানা স্তরে এমন টাকা ফেরতের উদাহরণ এর আগে নেই।