সমালোচনায় বাম, কংগ্রেসও
Union Budget 2025

মমতার মতে ‘ভয়াবহ’ বাজেট, পাল্টা বিজেপির

বাজেটকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাবে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ই দেখছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:০৯
Share:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।

কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তের সুরাহার বন্দোবস্ত হয়েছে বলে দাবি করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং বিজেপি যখন উচ্ছ্বসিত, সেই বাজেটকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাবে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ই দেখছে। বিহার বাদে কোনও রাজ্যের জন্যই কোনও বাজেটে কিছু সংস্থান নেই যে বলে যে অভিযোগ তৃণমূল এবং অন্যান্য বিরোধী দল তুলছে, তার পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপিও।

Advertisement

নির্মলা সীতারামনের বাজেট প্রসঙ্গে মুখ‍্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্য, “জিরের উপরে জিএসটি, অথচ হিরের উপরে নেই! এটা কী ধরনের বাজেট? রাজ‍্য তো কিছুই পেল না। সাধারণ মানুষই বা কী পেলেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই বাজেট ভয়াবহ!’’ রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র তাঁদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এই বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।’’ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনও উদ্যোগ নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই বাজেটেও রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ধারাবাহিকতাই দেখেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আয়করে ছাড়ের সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে বিজেপি প্রচারে নেমে গেলেও কেন্দ্রীয় বাজেটে বিপর্যয় নেমে আসবে বলেই মনে করছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামনের বাজেট বক্তৃতার পরেই শনিবার রাজ্যের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত বলেছেন, ‘‘বিশেষজ্ঞেরা এই বাজেটে গভীর ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস দেখছেন।’’ তাঁর মতে, এই বাজেটে মহিলা, যুব ও কৃষকের জন্য কোনও সুখবর নেই। এই মুহূর্তে দেশে বেকারত্বের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘কর্মসংস্থানের জন্য কোনও পরিকল্পনাই নেই কেন্দ্রীয় বাজেটে।’’

Advertisement

একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বরাদ্দে কাটছাঁটের সমালোচনা করে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘অবিশ্বাস্য হলেও তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের কল্যাণে তিন শতাংশ অর্থ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক পরিষেবা ও জনকল্যাণে পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ কম করা হয়েছে। খাদ্যের ভর্তুকিতেও কেন্দ্রীয় সরকার এক শতাংশ বরাদ্দ কমিয়েছে।’’ আয়করে ছাড়ের প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘দেশে মাত্র ৮ কোটি মানুষ আয়করের আওতায় পড়েন। এই ছাড়ে তাঁরা যে সুবিধা পাবেন, তা মুদ্রাস্ফীতিই খেয়ে নেবে!’’ অমিতের কথায়, ‘‘বিমা ক্ষেত্রে ১০০% প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মানে কী? এর ফলে এলআইসি-সহ অন্য সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, এমনকি, দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে।’’

অভিষেকও এই বাজেটকে ভোটমুখী রাজ্যের জন্য বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলার প্রতি বঞ্চানার অভিযোগ করে অভিষেক বলেছেন, “আগের বার অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের জন্য ভাবা হয়েছিল। অন্ধ্রে ভোট মিটে গিয়েছে। সামনে বিহারের নির্বাচন। সেই কারণেই বিহারকে এই উপহার।” তবে আয়কর ছাড় প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি অভিষেক। বাজেট পুরোপুরি পড়ার পরে এ বিষয়ে যা বলার বলবেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের শাসক দলকে আক্রমণ করে অভিষেকের আরও বক্তব্য, ‘‘যখন বাংলা থেকে ১৮ জন বিজেপি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখনও বাংলা কিছুই পায়নি। এখনও বাংলার ১২ জন বিজেপি সাংসদ রয়েছেন। কিন্তু তা-ও বাংলা কিছুই পেল না!’’

পশ্চিমবঙ্গেও ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের পক্ষে সওয়াল করে তৃণমূলের বাজেট-তোপ প্রসঙ্গে অবশ্য পাল্টা সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মন্তব্য, “তৃণমূলকে বলব, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কটা ঠিক করুন। তৃণমূলকে বলব, আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা চালু করুন, কেন্দ্রে আবাস যোজনার ঠিক তালিকা পাঠান। পিএম কিসানের জন্য কেন ৩১ লক্ষ চাষির নাম পাঠানো হয়নি? বিশ্বকর্মা যোজনার জন্য কেন ৬ লক্ষ হস্তশিল্পীর আবেদনপত্র পড়ে আছে? একলব্য স্কুলের জন্য জমি কেন দেওয়া হচ্ছে না? উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি কম করুন।’’

কেন্দ্রের বাজেটে দেশের মানুষের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলেছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। সেই সুরেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম কলকাতায় বলেছেন, ‘‘বাজেটে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া হয়নি। দিল্লির ভোটের জন্য মধ্যবিত্তদের খুশি করার চেষ্টা হয়েছে। আর বিহারে নির্বাচন রয়েছে বলে সে রাজ্যের ঘোষণা। এটা দেশের বাজেট নয়।’’ দলের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বেকার ও কর্মসংস্থানের সমস্যাকে বাজেটে উপেক্ষা করা হয়েছে। রেলের যাত্রী নিরাপত্তার প্রশ্নকে এড়ানো, বিমা ক্ষেত্রে নতুন কোনও প্রযুক্তি আনার সম্ভাবনা নেই অথচ সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ১০০%, একশো দিনের কাজ বা কৃষিক্ষেত্রকে উপেক্ষা— এ সব প্রশ্ন তুলে বাজেটের সমালোচনায় সরব হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, এসইউসি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন-সহ বিভিন্ন বামপন্থী দলই। আর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘মধ্যবিত্তকে আয়করে ছাড় দেওয়ার বিরোধিতা কেউ করছি না। কিন্তু আয়কর বিলে কী থাকে, সেটা দেখতে হবে। আর এই একটা ওষুধে সব সমস্যার সমাধান তো হবে না। আয়করের আওতার বাইরে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ আছেন, তাঁদের খরচ করার মতো অর্থের সংস্থান কী ভাবে আসবে, তার দিশা বাজেটে নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement