গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শাসকের বিপুল জয় নিয়ে সংশয় নেই কোনও শিবিরেরই। প্রশ্ন শুধু প্রাপ্তির সংখ্যা নিয়ে।
কলকাতা পুরভোটে গত বার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১৪টিতে জিতেছিল তৃণমূল। এ বার কত হবে? মঙ্গলবারের ভোট গণনার আগে শাসক শিবিরের দাবি, ১৩৪-এর কম নয়।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্যের বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের বড় অংশও একান্তে স্বীকার করে নিচ্ছেন শাসকের নজিরবিহীন জয়ের সম্ভাবনার কথা। রবিবার ভোটগ্রহণ পর্বের ‘চিত্র’ দেখে তাঁদের অনেকেই বলছেন, বিরোধীরা দু’অঙ্ক ছুঁতে পারলে সেটাই হবে ‘যথেষ্ট’। ২০১৫ সালে বামেরা ১৫, বিজেপি সাত, কংগ্রেস পাঁচ এবং অন্যেরা তিনটি ওয়ার্ডে জিতেছিল। বিরোধীদের আশা, এ বার তাঁরা ১০ পেরোবেন।
প্রার্থী এবং এজেন্টকে মারধর, বোমাবাজি, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের নানা ঘটনা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রবিবার ঘটেছে বলে অভিযোগ। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে। কলকাতায় নির্বাচনী গোলমালের ‘ইতিহাসের’ নিরিখে অবশ্য রবিবার বড় কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দিনভর উত্তেজনার এই ভোটে শহর জুড়ে শাসক শিবিরের যে একতরফা দাপট দেখা গিয়েছে, অতীতে ভোটের কলকাতা তা দেখেছে কি না মনে করতে পারা যাচ্ছে না। বিরোধীদের এমন ‘আশা’র পিছনে, শাসকের ওই প্রতাপ প্রদর্শন বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও কয়েকটি ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন এ বারের কলকাতা পুরভোট। কলকাতা পুর এলাকার বাইরে (বিধাননগরে) রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বাড়ি পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা, বা এমএলএ হস্টেলের গেট তালাবন্ধ করে বিধায়কদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার ঘটনাও রয়েছে এই তালিকায়।
রাজ্য প্রশাসন এবং শাসকদলের যুক্তি, ভোটের দিন উত্তেজনা এড়ানোর উদ্দেশ্যেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছিল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ভোটের দিন হামলা বা কারচুপির ঘটনা ঘটলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের উদ্দেশে মিছিল শুরু করবেন। রবিবার ভোট চলাকালীন এমন পরিস্থিতি ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল বলেই শুভেন্দু এবং বিজেপি বিধায়কদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
এ ক্ষেত্রে ভোটের আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্দেশিকাও শাসক শিবিরের হাতিয়ার। ওই নির্দেশিকায় ভোটের দিন বলা হয়েছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ঘোরাফেরা করতে পারবেন না। কেবলমাত্র যাঁরা প্রার্থী, তাঁদের ক্ষেত্রে নিজেদের ওয়ার্ডে ঘোরাফেরায় ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
এবিপি আনন্দ-সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষা পূর্বাভাস দিয়েছে, কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩১টিতে জয়ী হয়ে পুরসভার ক্ষমতায় ফিরতে পারে তৃণমূল। বাকি ১৩টির পেতে পারে বিজেপি। ওই সমীক্ষা অনুযায়ী তৃণমূল পেতে পারে ৫৮ শতাংশ ভোট। বিজেপি ২৮ শতাংশ। বামেরা পাঁচ শতাংশ এবং কংগ্রেস সাত শতাংশ ভোট পেতে পারে। নির্দল এবং অন্যেরা পেতে পারে দুই শতাংশ ভোট।
এটা ঠিক যে, এ ধরনের নমুনা বুথ ফেরত সমীক্ষায় সব সময় বাস্তবের প্রতিফলন ঘটে না। কিন্তু ইভিএম খোলার পরে সমীক্ষার ফল মিলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভোটারদের ভাবনার আভাস পেতেও এই ধরনের সমীক্ষার গুরুত্ব রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন। তা ছাড়া, মে মাসে নীলবাড়ির লড়াইয়ে কলকাতায় তৃণমূলের ফলের দিকে নজরে রাখলে কার্যত ছোট লালবাড়ি দখলের যুদ্ধে বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বভাসেরই প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে। তবে আসল ফল জানতে অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টার।