অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
২০০১ সাল থেকে টানা পাঁচ বার বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর থেকেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য। আপাতত শিল্পমন্ত্রী।
২০১০ সালের পুরভোটে বামপন্থীদের হটিয়ে পার্থের বিধানসভা কেন্দ্রের ওয়ার্ডগুলির দখল নিয়েছিল তৃণমূল। ২০১৫ সালে পূর্ব বেহালায় বামেরা দাঁত ফোটাতে না পারলেও বেহালা পশ্চিমের দু’টি ওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করে সিপিএম। ১২৭ এবং ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও সিপিএমের কো-অর্ডিনেটররা রয়ে গিয়েছেন। গত বিধানসভা ভোটে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জয় পেয়েছেন পার্থ। তাঁর বিধানসভার অধীন ১০টি ওয়ার্ডেই ‘লিড’ রয়েছে তাঁর। কিন্তু মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে ভর করেই সিপিএম পেয়েছে ৪৭ হাজার ভোট। ৬৩ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। রাজ্যে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পার্থের কেন্দ্রে পুরভোটে এখনও ‘ফ্যাক্টর’ কিন্তু বামেরাই।
বেহালা পশ্চিমের ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা আইনজীবী সুব্রত মিস্ত্রি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতাও বটে। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন,বেহালা পশ্চিমে সিপিএমের একটা ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত ভাবেই তিনি পুরভোটে তৃণমূল প্রার্থীদের এগিয়ে রাখছেন। সুব্রতের কথায়, ‘‘বেহালা পশ্চিমের ওই দু’টি ওয়ার্ডে অনেক বছর ধরেই সিপিএমের ভোটব্যাঙ্ক অটুট। কিন্তু বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর আমরা এতটাই এগিয়ে গিয়েছি যে, তৃণমূল প্রার্থীদের ধারেকাছেও বামপন্থী প্রার্থীরা থাকতে পারবেন না। আমাদের বিধায়ক পার্থ’দা যে বিরাট ব্যবধানে জিতেছেন, তার থেকেই প্রমাণিত, বিরোধীরা বেহালা পশ্চিমের কোথাও লড়াই দিতে পারবেন না।’’
ঘটনাচক্রে, এ বারের পুরভোটে বেহালা পশ্চিমে জমা জলের সমস্যা একটি বড় বিষয়। এলাকার বাসিন্দারাও জানেন ১১৯, ১২৫, ১২৬, ১২৭ এবং ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে জল জমার সমস্যা রয়েছে।
সেই সমস্যাগুলির দিকে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর নীহার ভক্ত। তাঁর ওয়ার্ডটি মহিলাদেরজন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় নীহার আর প্রার্থী হতে পারেননি। বদলে তাঁর দিদি রিনা ভক্তকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। নীহার বলছেন, ‘‘বিধানসভা ও পুরসভা ভোটের প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা। তাই পুরভোটে বিধানসভা ভোটের পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা কাটমানি নিইনি, প্রোমোটিংও করিনি। মানুষকে পরিষেবা দিয়েছি। তাই আমাদের জায়গা আমরা অবশ্যই ধরে রাখতে পারব।’’
বেহালা পশ্চিমের বিধানসভার অংশ ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন মহিলা নেত্রী রাখী চট্টোপাধ্যায়। তিনিও প্রত্যাশিত ভাবেই বিধানসভা নির্বাচন ও পুরভোটকে এক করে দেখতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বছরের পর বছর ধরে জমা জলের সমস্যা রয়ে গিয়েছে। সমস্যার সমাধান কেন হয়নি, তা-ও আমরা বাসিন্দারা জানি না। ঘোলসাহাপুর বাজার বেহালার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। সেখানে না আছে উন্নত ভ্যাট। না আছে স্বাস্থ্যকর শৌচালয়। এগুলো মানুষ দেখেছেন। তাই ভোট হবে স্থানীয় বিষয়ের ভিত্তিতে।’’
বিধানসভা ভোটে সহজ জয় এসেছে। পুরভোটে স্থানীয় বিষয়ের মোকাবিলায় কি ঘাম ঝরাতে হবে পার্থকে? পারবার পার করেছেন। এখন পার্থের লড়াই গোষ্পদের জমা জল নিয়ে।