নির্মাণ-বর্জ্য সংগ্রহ, তার পরিবহণ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য উৎপাদকের থেকে কত টাকা নেওয়া হবে, তা ধার্য করল কলকাতা পুরসভা। ফাইল চিত্র।
নির্মাণ-বর্জ্য সংগ্রহ, তার পরিবহণ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য উৎপাদকের থেকে কত টাকা নেওয়া হবে, তা ধার্য করল কলকাতা পুরসভা। নতুন নীতি অনুযায়ী, ৫০০ বর্গমিটারের বেশি এবং তার থেকে কম এলাকার ক্ষেত্রে আলাদা টাকা ধার্য করা হয়েছে। এই দুই ভিন্ন মাপের এলাকায় কত পরিমাণ নির্মাণ-বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে এবং বর্জ্যের সংগ্রহস্থল থেকে প্লান্টের দূরত্ব কত, তার নিরিখে পরিবহণ ও প্রক্রিয়াকরণ বাবদ বর্জ্য উৎপাদকের থেকে ওই টাকা নেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছে। এত দিন এ সবের উল্লেখ ছিল না পুর নথিতে। কিন্তু, সারা দেশেইনির্মাণ-বর্জ্যের (কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ওয়েস্ট) যথাযথ ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পরিবেশ আদালত বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় নতুন এই নীতির প্রণয়ন।
পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলছেন, ‘‘নির্মাণ-বর্জ্য সংগ্রহ, তার পরিবহণ ও প্রক্রিয়াকরণে কত টাকা নেওয়া হবে, তা এত দিন নির্দিষ্ট ভাবে বলা ছিল না। তাই নতুন নীতি এসেছে।’’ প্রসঙ্গত, নির্মাণ-বর্জ্য নিয়ে পরিবেশ আদালতের রায়ের পাশাপাশি রয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষাও। দেশের ন’টি শহরে করা ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, দৈনিক উৎপাদিত নির্মাণ-বর্জ্যের নিরিখে চেন্নাই ও মুম্বইয়ের পরেই আছে কলকাতা। ওই দুই শহরে দৈনিক নির্মাণ-বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার টন, কলকাতায় সেখানে তা দৈনিক ১৬০০ টন। ফলে নির্মাণ-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট নীতি না থাকা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুরসভার কাছে।
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ স্বশাসিত সংস্থা ‘টেকনোলজি ইনফরমেশন ফোরকাস্টিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট কাউন্সিল’ (টিআইএফএসি)-এর হিসেব মাথায় রেখে উল্লেখিত টাকা ধার্য করা হয়েছে। সেই নিয়মে বলা হচ্ছে, নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার ‘বিল্ট আপ এরিয়ায়’ ৫০ কিলোগ্রাম নির্মাণ-বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু, নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে বর্জ্যের পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে যায়। প্রতি বর্গমিটার বিল্ট আপ এরিয়ায় সেই বর্জ্যের পরিমাণ ৩০০-৫০০ কিলোগ্রাম। টিআইএফএসি-র হিসেব এও বলছে, মেরামতি বা সংস্কারের সময়ে প্রতি বর্গমিটারে এই বর্জ্যের পরিমাণ ৪০-৫০ কিলোগ্রাম। ফলে কত পরিমাণ জায়গায় কী ধরনের কাজ হচ্ছে, অর্থাৎ, নতুন নির্মাণ বা ভাঙা বা সংস্কারের উপরে নির্ভর করে এই টাকা ধার্য হয়েছে।
তবে, ৫০০ বর্গমিটারের কম এলাকায় উৎপাদিত নির্মাণ-বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট উৎপাদককে কোনও টাকা দিতে হবে না। তা পুরসভাই বহন করবে। শুধু সংগ্রহ ও তা নিয়ে যাওয়ার টাকা উৎপাদককে দিতে হবে। কিন্তু ৫০০ বর্গমিটার এলাকার বেশি উৎপাদিত বর্জ্যের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণের খরচ বাবদ উৎপাদককে টনপিছু ৪১৯ টাকা করে দিতে হবে। দু’টি ক্ষেত্রেই তদারকির জন্য আলাদা হারে টাকা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রাজারহাট-নিউ টাউনের পাথরঘাটায় পাঁচ একর জমির উপরে নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের প্লান্ট তৈরি করেছে পুরসভা। দরপত্রের মাধ্যমে সেই প্লান্টের দায়িত্ব হায়দরাবাদের এক বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়াহয়েছে। নির্মাণ-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য ওই সংস্থাকে টনপিছু ৩৬৯ টাকা দেওয়ার কথা কলকাতা পুরসভার। এ বার প্রক্রিয়াকরণ ও আনুষঙ্গিক খরচ নির্মাণ-বর্জ্যেরউৎপাদকদের থেকে নেওয়ার জন্যই এই নতুন নীতি বলে পুরসভা সূত্রের খবর।