খালেদ চৌধুরী।
খালেদ চৌধুরীর ছবিজীবন গড়ে উঠেছিল মূলত বই-প্রকাশনাকে ঘিরে। বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণে আজও তিনি এক অবিস্মরণীয় নাম। এই কাজের সূত্রেই দীর্ঘ শিল্পীজীবনে তিনি রচনা করেছিলেন অসংখ্য প্রতিকৃতি। যদিও পেশাদারি কাজের বাইরে নিছক মনের খেয়ালেও তাঁর আঙুল মাঝেমাঝেই জন্ম দিয়েছে বেশ কিছু প্রতিকৃতির। খালেদ চৌধুরীর আঁকা মোট পোর্ট্রেটের সংখ্যা বলা শক্ত। তবে সেই তালিকা তৈরি করা গেলে চমক লাগবে নিঃসন্দেহে। ডারউইন থেকে সলিল চৌধুরী, গোর্কি থেকে নিতাই দাস বাউল— কী বিপুল বৈচিত্রের বিস্তার সেখানে। মুখোমুখি বসে এঁকেছেন এক দিকে যেমন শম্ভু মিত্রের মতো পরম সুহৃদ ও সহযোদ্ধাকে, অন্য দিকে তেমনই ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর বিশ্বস্ত নেপালি পরিচারক বাহাদুরের মুখাবয়বও। তাঁর আঁকা পোর্ট্রেট দীর্ঘ দিন ধরে সংগ্রহ করেছেন খালেদ-জীবনীকার প্রদীপ দত্ত। এ বার তাঁরই সুচারু পরিবেশনায় প্রকাশিত হতে চলেছে খালেদ চৌধুরীর আঁকা প্রতিকৃতির বই ‘বিচিত্র মুখ’, প্রকাশক উদ্ভাস। প্রায় পঞ্চাশটি মুখের সঙ্গে সঙ্কলিত হয়েছে তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ছবিটি প্রথম প্রকাশের ইতিকথাও। আগে কোথাও ছাপা হয়নি এমন বেশ কিছু ছবিও রয়েছে। কত বিচিত্র শৈলীতে মুখাবয়বকে ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। নানা মাধ্যমে তাঁর দক্ষতার প্রকাশ দেখে ভাবাই শক্ত যে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত শিল্পী। সঙ্গে তাঁরই করা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি, বাঁ দিকে শিল্পী খালেদ চৌধুরী।
কৈশোরে মাকে হারান, তার সঙ্গে ছিল বাবার চূড়ান্ত উপেক্ষা ও পীড়ন। পরিণামে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, বাবার দেওয়া নাম ‘চিররঞ্জন’ মুছে ফেলে হয়ে উঠেছিলেন এমন এক শিল্পী যিনি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের চেয়েও বড় স্থান দিয়েছিলেন মানবিকতাকে। বাংলা থিয়েটারের মঞ্চ ভাবনায় বিপ্লব এনেছিলেন তিনি। ২০১৯-এর ২০ ডিসেম্বর একশো বছর পূর্ণ হবে তাঁর। জন্মশতবর্ষে আয়োজিত হয়েছে ‘শিল্পী-স্মরণ’, ২৮ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় বই-চিত্র সভাঘরে। সূচনা-কথা ও সামগ্রিক সঞ্চালনায় দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, শিল্পীর স্মৃতিচারণায় প্রদীপ দত্ত এবং খালেদ চৌধুরীর আঁকা প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ নিয়ে সচিত্র উপস্থাপনা-সহ আলোচনা করবেন চিত্রশিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত। নাসের হোসেন প্রকাশ করবেন ‘বিচিত্র মুখ’।
নীরবে শতবর্ষে
সহপাঠীর বিশাল বাগানবাড়িতে ‘চারুলতা’ ছবিটি তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। বন্ধু-গৃহকর্তার নাম সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। ১৯২০-র ২০ অক্টোবর সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা আইনজীবী সুধীর কুমার রায়, মা অপর্ণা দেবী, দেশবন্ধুর কন্যা। মিত্র ইনস্টিটিউশন, সেন্ট জ়েভিয়ার্স ও প্রেসিডেন্সি কলেজের হিরের টুকরো ছাত্র খেলার মাঠেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ব্যারিস্টারি পাশ করে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন। কর্পোরেট আইনবিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার কিছু দিনের মধ্যেই ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে জিতে বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হলেন। দীর্ঘ চার দশকের সক্রিয় রাজনীতি জীবনের সেই শুরু। রাজ্যের মন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যপাল এমনকি আমেরিকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পদে প্রশাসনিক দক্ষতার নজির স্থাপন করেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। ইতিহাস ও সাহিত্যের অনুরাগী, সঙ্গীতপ্রেমী মানুষটি চলে গিয়েছেন ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর। ২০১২-য় বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন’ সম্মানে ভূষিত করে। ভ্রাতুষ্পুত্র সঞ্জিত রায় জানিয়েছেন, ২ বেলতলা রোডের বাড়িতে আজও তাঁর বই, চিঠিপত্র ও স্মৃতি সযত্নে রক্ষিত হচ্ছে। সদ্য জন্মশতবর্ষে পা দিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়।
লিপি চক্রবর্তী
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘‘সুনীতিকে উপাধি দেওয়া উচিত— লিপিবাচস্পতি কিংবা লিপিসার্বভৌম কিংবা লিপিচক্রবর্তী।’’ বলেছেন সুনীতিকুমারের সেই শক্তির কথা, যে ‘‘শক্তির মূলে আছে বিশ্বব্যাপারের প্রতি তাঁর মনের সজীব আগ্রহ।’’ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রতি বছরেই তাঁর জন্মদিন ২৬ নভেম্বর আয়োজন করে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা। এ বছরেও সে দিন সন্ধে ৬টায় এই বক্তৃতা উপস্থাপন করবেন ভাষাবিদ উদয়নারায়ণ সিংহ। বিষয়: ‘বিপন্ন ভাষা, সঙ্কট সংস্কৃতির’। ভাষার সঙ্কট যে বৃহত্তর সঙ্কটের নানা এলাকাগুলি গভীর করে তোলে তার কথাই বিস্তার পাবে সেই বক্তৃতায়। সভামুখ্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র।
মঞ্চগানে কলকাতা
কলকাতার ঐতিহ্য সংরক্ষণে নিশীথরঞ্জন রায় সমমনস্ক মানুষদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রিজ়ারভেশন অব আর্কাইভ্যাল মেটিরিয়ালস অ্যান্ড মনুমেন্টস অব ক্যালকাটা’। এক সময় বইমেলায় ছিল তাদের নিত্য উপস্থিতি। প্রতিষ্ঠাতার প্রয়াণের পর নিশীথরঞ্জন রায় স্মারক বক্তৃতার মাধ্যমে গত ২২ বছর ধরে কলকাতার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলায় প্রয়াসী হয়েছে সংস্থা। সেই ধারাবাহিকতাতেই ২৯ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় বাংলা আকাদেমি সভাঘরে ‘মঞ্চগানে কলকাতা’: দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়।
লেখ্যাগার সপ্তাহ
মহাত্মা গাঁধীর সার্ধশতজন্মবর্ষ পূর্ণ হল সদ্য, আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষের সূচনা হয়েছে সবে। আলোচনা, তর্ক, বইপ্রকাশ চলছেই এই দুই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে। এ বার ২৮ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাৎসরিক লেখ্যাগার সপ্তাহ পালিত হবে এই দু’টি উপলক্ষ উদ্যাপনের মাধ্যমে। এই দুই ব্যক্তিত্বের সম্পর্কে রাজ্য লেখ্যাগারে যে সমস্ত নথি রক্ষিত এবং সংগৃহীত আছে সে সবকে কেন্দ্র করেই এ বারের প্রদর্শনী আয়োজিত হচ্ছে ৪৩ শেক্সপিয়র সরণির রাজ্য লেখ্যাগার ভবনে। ২৮ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে বলবেন কৃত্যপ্রিয় ঘোষ। পুরো বছর প্রদর্শনী খোলা থাকবে প্রতি দিন ১০-৫টা।
সুনীল-উৎসব
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘিরে এ বার কলকাতায় জমজমাট উৎসব। নন্দন-৩ ও জীবনানন্দ সভাঘরে ২৭, ২৮ ও ৩০ নভেম্বর দুপুর ১-রাত ৮টা পর্ষন্ত চলবে ‘দেখা হবে চন্দনের বনে’। শঙ্খ ঘোষ, স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন, বিভাস চক্রবর্তী প্রমুখের পৃষ্ঠপোষণায়, শ্রীজাত-বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়-অংশুমান করের আহ্বানে, সুবোধ সরকারের সভাপতিত্বে তিন দিনের এই অনুষ্ঠানের সাতটি অধিবেশনে সুনীলের কবিতাপাঠে ও আলোচনায় যোগ দেবেন প্রায় তিনশো জন কবি, আবৃত্তিকার ও আলোচক। থাকবে সুনীলকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র, ভিডিয়ো সাক্ষাৎকারের মন্তাজ। থাকবে তাঁর লেখা নাটকপাঠ ও গান। দেখানো হবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাহিনি-নির্ভর চলচ্চিত্রও।
শিশু চলচ্চিত্র
মনে আছে ‘টু ব্রাদার্স’ ছবিটির কথা? ব্রিটিশ-ফরাসি সহযোগিতায় ২০০৪ সালে তৈরি পারিবারিক অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম— পরিচালক ছিলেন জাঁ জাক আন্নো। ছোটবেলায় আলাদা হয়ে যাওয়া দুই ব্যাঘ্রশাবক আবার কী করে মিলিত হল, খুঁজে পেল তাদের মাকেও, সেই গল্প। জনপ্রিয় ছবিটি দেখা যাবে সিনে সেন্ট্রাল, কলকাতা আয়োজিত উনিশতম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে। ২৫ নভেম্বর বিকেল ৫টায় পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের ‘পূর্বশ্রী’ প্রেক্ষাগৃহে উৎসবের উদ্বোধন করবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রধান সহযোগী ইউনিসেফ, পশ্চিমবঙ্গ, সঙ্গে আছে ‘তালাস’ সংস্থাও। উদ্বোধনী ছবি তপন সিংহের ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, কলকাতায় প্রদর্শিত হচ্ছে কয়েক দশক পর। থাকছে বাংলাদেশ, বেলারুশ, চিন, ডেনমার্ক, ইরান, পেরু, রাশিয়া— নানা দেশের ছবি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নন্দনে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতায় ও নানা জেলায় চলবে।
বিজ্ঞানপথিক
জগদানন্দ রায় (১৮৬৯-১৯৩৩) ও ইন্দুমাধব মল্লিক (১৮৬৯-১৯১৭)। প্রথম জন বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে আমৃত্যু ব্রতী ছিলেন; দ্বিতীয় জনের নাম ইক্-মিক্ কুকারের সৌজন্যে সে কালে লোকের মুখে মুখে ফিরত। রবীন্দ্র-স্নেহধন্য জগদানন্দ (সঙ্গের ছবি) পঁয়ত্রিশটি গ্রন্থ ও দুই শতাধিক প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলার কিশোর-কিশোরীদের মন থেকে কুসংস্কারের ছায়া সরিয়ে বিজ্ঞান চিন্তার পরিসর তৈরি করতে চেয়েছিলেন। অন্য দিকে ইন্দুমাধবের কাজের বৃত্তে জনস্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, অটোভ্যাকসিন চিকিৎসা পদ্ধতির সফল প্রয়োগ তো ছিলই, সেই সঙ্গে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সমস্ত উপাধি-পরীক্ষা প্রদান করা’র কিংবদন্তি-কৃতির অধিকারী এই চিকিৎসক ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরম ভরসাস্থল। এই দুই বিজ্ঞান-পথিকের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে অহর্নিশ পত্রিকার আয়োজনে ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছ’টায় কলেজ স্ট্রিট বই-চিত্র সভাঘরে বলবেন আশীষ লাহিড়ী, শ্যামল চক্রবর্তী ও শঙ্করকুমার নাথ।
শরণার্থী নিয়ে
বিশ্ব জুড়ে অভিবাসন ও শরণার্থী সমস্যা বেড়ে চলেছে। গৃহযুদ্ধ, মন্বন্তর বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতি দিনই ভিটেছাড়া হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এ বারও ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ (সিআরজি) তাদের বার্ষিক সম্মেলনে অভিবাসন ও শরণার্থী সমস্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার আয়োজন করেছে। রোজা লুক্সেমবার্গ স্টিফটুং-এর সহায়তায় আয়োজিত এই আলোচনাচক্রে দেশবিদেশ থেকে অন্তত ৬০ জন গবেষক, বিশেষজ্ঞ হাজির হবেন। রণবীর সমাদ্দার, পলা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমীর কুমার দাস, সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরীরাও থাকছেন। ২৫ নভেম্বর সল্টলেকের হোটেল সোজোর্নে বিকেল ৫টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, পরের তিন দিন সল্টলেকের হোটেল মনোটেল-এ কর্মশালা হয়ে ২৯ তারিখ সারা দিন আলোচনাচক্র।
একুশে সই
১৯৯৯ সালে একটি কর্মশালায় নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন নবনীতা দেব সেন-সহ আরও কয়েক জন বাঙালি লেখিকা। মেয়েদের লেখনীর উপর নানা ধরনের সেন্সরশিপ নিয়ে কর্মশালা। ফিরে এসে বাংলা লেখিকাদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরির ভাবনা এল নবনীতা দেব সেনের মাথায়। ৩০ নভেম্বর ১৯৯৯, রাধারাণী দেবীর জন্মদিনে জন্ম নিল ‘সই’— যার তিনটি অর্থ— সখি, স্বাক্ষর ও সহ্য করি-র তৃতীয়টি গ্রহণযোগ্য ছিল না নবনীতার কাছে। গত কুড়ি বছর ধরে সইকে যত্ন ও হৃদয়ের উত্তাপ দিয়ে লালন করেছেন তিনি। ভালো-বাসা বাড়ি ছিল সইয়ের মিটিঙের জায়গা। ২০০৫ থেকে শুরু হয় সইয়ের বইমেলা। মার্থা নুসবম থেকে ইরম শর্মিলা, মৃণাল পান্ডে থেকে কমলা ভাসিন, উর্বশী বুটালিয়া থেকে মামাং দাই— কে আসেননি সই সভামুখ্যের ডাকে! ৩০ নভেম্বর বাংলা আকাদেমি সভাঘরে বেলা ১২-৪টে সইয়ের ২০ বছরের জন্মদিনে শঙ্খ ঘোষের উপস্থিতিতে নবনীতাকে স্মরণ করবেন অমিয় দেব, বাণী বসু ও শাঁওলী মিত্র। ‘অবরুদ্ধ সময়ের লেখা’ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে স্থির করেছিলেন নবনীতা নিজেই। আলোচনায় জয়া মিত্র, অন্তরা দেব সেন, তিলোত্তমা মজুমদার প্রমুখ। প্রকাশ পাবে নির্বাচিত ‘সই সাবুদ’।
ইন্দিরা স্মরণ
‘‘ছেলেবেলা থেকেই আমরা গানবাজনার আবহাওয়াতে মানুষ— দেশী বিলিতি দু’রকমেরই।’’ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বিদুষী নারী ইন্দিরা দেবী চৌধুরানি তাঁর ‘সংগীতস্মৃতি’তে এমন কথাই লিখেছিলেন। কণ্ঠের পাশাপাশি যন্ত্রসঙ্গীতেও তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। পরে তিনি রবীন্দ্রনাথের দু’শোর বেশি গানের স্বরলিপি লিখেছিলেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গানে তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘রবীন্দ্রসংগীতের ত্রিবেণীসংগম’ একটি ঐতিহাসিক দলিল। নিজেও বহু গান লিখেছেন। ৩০ নভেম্বর সন্ধেয় কলাকুঞ্জ প্রেক্ষাগৃহে তাঁকে নিয়ে ‘ইন্দিরা’ সঙ্গীত শিক্ষায়তন ‘সুরে সুরে সুর মেলাতে’ অনুষ্ঠান করবে। প্রথম পর্যায়ে ইন্দিরা দেবী রচিত গানে অংশ নেবেন ইন্দিরার শিল্পীরা এবং স্নিগ্ধদেব সেনগুপ্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইন্দিরা দেবী-কৃত স্বরলিপিভিত্তিক রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনে থাকবেন অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল মিত্র, জয়তী চক্রবর্তী এবং ইন্দিরা গোষ্ঠী। পাঠে প্রণতি ঠাকুর।
গ্রিক ছবির উৎসব
থিয়ো অ্যাঞ্জেলোপুলোসের ছবি দেখেননি মানে খাঁটি সিনেমাপ্রেমীই নন, এমন কথা চালু আছে শহরের ছবি-বোদ্ধা মহলে। এ বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র-উৎসবেও সবাই হইহই করে দেখেছেন কোস্তা গাভ্রাস-এর ছবি। এর বাইরেও আছেন বহু প্রবীণ-নবীন গ্রিক পরিচালক— পানোস কারকানেভাতোস থেকে ইয়ানিস সাকারাদিস বা বহু-আলোচিত ইয়র্গস ল্যান্থিমস। এ বার গ্রিক পরিচালকদের ছবি দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে ‘ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস’, সঙ্গী ভারতের গ্রিক দূতাবাস, দিল্লির ‘ইন্দো-হেলেনিক ফ্রেন্ডশিপ লিগ’ ও এসআরএফটিআই। ২৫-২৯ নভেম্বর এসআরএফটিআই-এর মূল প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে ছ’টি গ্রিক ছবি। আজ সন্ধে ছ’টায় উদ্বোধন। ইন্দো-গ্রিক বন্ধুতার প্রতিনিধি আফ্রোদিতে কৃষ্ণমূর্তির স্মরণে নিবেদিত ফোরাম-এর এই ‘প্রথম কলকাতা গ্রিক চলচ্চিত্র উৎসব’।
শতবর্ষে স্মরণ
বিশ্বের সঙ্গে যোগ ছিল রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন নিয়েই আজীবন কাজ করেছেন শিল্পী দিনকর কৌশিক। জন্ম ১৯১৮-য়, কর্নাটকের ধারওয়াড়ে। যোগ দেন ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে। কর্মজীবন শুরু দিল্লি পলিটেকনিকে, তার পর লখনউ আর্ট কলেজের প্রিন্সিপাল। তিনি কলাভবনের ছাত্র ছিলেন ১৯৪০-৪৬। গুরু নন্দলাল বসুর প্রয়াণের পর বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর অনুরোধে ১৯৬৬ সালে কলাভবনের ভার নিয়ে শান্তিনিকেতনে আসেন। ১৯৭৮-এ অবসর নেন। শান্তিনিকেতনেই প্রয়াত হন ২০১১’র ১৩ ফেব্রুয়ারি। দেশবিদেশে তাঁর কাজের প্রদর্শনী হয়েছে।
কলাভবনের শিল্পচর্চায় নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন তিনি। যুক্ত করেছিলেন বহু শিল্পী ও শিল্প-আলোচককে। ‘নন্দলাল বসু: ভারতশিল্পের পথিকৃৎ’ বা ‘শান্তিনিকেতনের দিনগুলি’ বইতে রয়েছে তাঁর স্মৃতি। নন্দলালের জন্মদিন উপলক্ষে নন্দন মেলা-র সূচনাও করেন তিনিই। তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে শান্তিনিকেতন কলাভবনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে প্রদর্শনী ‘রিমেমবারিং দিনকর কৌশিক’। এখানে প্রদর্শিত হয়েছে দিনকর কৌশিকের শিক্ষক, ছাত্র এবং কলাভবনের শিক্ষকদের কাজ। ২১ ডিসেম্বর, ৩-৮টা পর্যন্ত(সোমবার বাদে)।
অর্থনীতি-রাজনীতি
অর্থনীতি আর রাজনীতি একে অপরের সঙ্গে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে পরস্পরকে পৃথক করা মুশকিল। কিন্তু অর্থনীতিবিদ কি রাজনীতির অংশ হতে পারেন? বিষয়টি বিতর্কিত, বিশেষ করে এই সময়ে। তাই প্রশ্নটির দিকে আবার নজর ফেরানো জরুরি। প্রতিষ্ঠা দিবসে এই প্রশ্নটি নিয়ে বিতর্কসভার আয়োজন করতে চলেছে ‘অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্ট’। ‘পলিটিক্স ইজ় নট দ্য ইকনমিস্টস বিজ়নেস’ প্রস্তাবনাটির পক্ষে বলবেন অনুপ সিংহ, সৌমেন শিকদার ও অচিন চক্রবর্তী। বিপক্ষে থাকবেন রতন খাসনবিশ, অভিরূপ সরকার ও দীপঙ্কর দাশগুপ্ত। ১ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় ভারতসভা হলে। এই বিতর্কসভার সঞ্চালনায় সঞ্চারী রায় মুখোপাধ্যায়।
ফরাসি সম্মান
মৃণাল সেনের ভাষায়, ‘‘অন্তহীন, ক্লান্তিহীন মননের এক চলমান স্রোত। তারই নাম চিন্ময়।’’ ভাষাবিদ ও চিন্তাবিদ চিন্ময় গুহ। বাংলা ইংরেজি ফরাসি— তিনটি ভাষা ও সংস্কৃতিকে একই সঙ্গে উপস্থাপন করেন অনায়াসে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে তাঁর খ্যাতি। টি এস এলিয়টকে নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ। ইংরেজি ও ফরাসিতে বক্তৃতা দিয়েছেন অক্সফোর্ড, সরবন-সহ বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্কৃতিমঞ্চে। বাংলায় অগ্রগণ্য প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। এ বার তাঁকে ‘অর্দ নাসিয়োনাল দ্যু মেরিত’ সম্মানে ভূষিত করলেন স্বয়ং ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ১৯৬৩ সালে প্রবর্তিত এই বিশেষ সম্মান ইতিপূর্বে পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গোল, ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ, চলচ্চিত্রকার রনে ক্ল্যার, অভিনেতা জাঁ-পল বেলমঁদো, জেরার দ্যপারদিয়ো প্রমুখ। ভারতে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত তাঁকে ওই রাষ্ট্রীয় পদক অর্পণ করবেন। চিন্ময়ই এর প্রথম বাঙালি প্রাপক।
বহুত্বের উদ্যাপন
গত কয়েক দশক ধরে ভারতে এক ভাষা, এক ধর্মের দেশ গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই চেষ্টা ভারত নামক ধারণার পরিপন্থী, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভাজনের জন্ম দিচ্ছে। প্রতিবেশীর প্রতি বাড়ছে অবিশ্বাস। অবিশ্বাস ঝেড়ে ফেলে, বৈচিত্রকে সম্মান জানাতে গভর্নমেন্ট গার্লস জেনারেল ডিগ্রি কলেজ ও ‘নো ইয়োর নেবার’-আহ্বানের যৌথ উদ্যোগে ২৮-৩০ নভেম্বর মোমিনপুরে অনুষ্ঠিত হবে ‘ডাইভার্সিটি ফেস্টিভাল’ বা বহুত্বের উদ্যাপন। কয়েকটি অ-সরকারি সংস্থা সহযোগী আয়োজক। উদ্বোধন করবেন ফিরহাদ হাকিম। ২৮ নভেম্বর খিদিরপুর অঞ্চলে পদযাত্রা দিয়ে সূচনা। তিন দিন ধরে একসঙ্গে বেঁচে থাকার কথা নিয়ে আলোচনা, গান ও গল্পের আসর। থাকবেন অনিতা অগ্নিহোত্রী, জয়া মিত্র ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৯ সকালে
‘কলকাতা তেইশ-এর কথা’ নামক নেবারহুড ওয়াক। দিল্লি থেকে গল্প শোনাতে আসছেন নাদিম শাহ ও ‘কলকাতা কারাভান’।